
প্রতি বছর রমজান মাস এলে রোজার বৈজ্ঞানিক উপকারিতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। কেউ বলেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের মতো রোজাও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা দেয়। আবার কেউ বলেন, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ও রোজা এক নয়, কারণ রোজার সময় পানিও নিষিদ্ধ থাকে, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। তবে বিতর্ক এড়িয়ে, এখানে আমরা শুধুমাত্র গবেষণালব্ধ তথ্য বিশ্লেষণ করব, যেখানে রোজার স্বাস্থ্যগত প্রভাব সরাসরি রোজাদারদের ওপর পরীক্ষা করা হয়েছে।
একটি গবেষণায় ৫৬ জন হৃদরোগীর ওপর রোজার প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। রোজার আগে ও পরে তাঁদের হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল সূচক পরিমাপ করা হয় এবং দেখা যায়, ২৮.৬% রোগীর উপসর্গের উন্নতি হয়েছে। আরেকটি গবেষণায় ৮২ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে, যাঁদের হৃদরোগের ঝুঁকি ছিল, তাঁদের লিপিড প্রোফাইল, ফাস্টিং ব্লাড সুগার, ইনসুলিন, সিআরপি, ব্লাড প্রেসার ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। রমজান শেষে দেখা যায়, তাঁদের হৃদরোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
লন্ডন রমজান স্টাডিতে ৮৫ জন রোজাদারের ব্লাড প্রেসার রোজার আগে ও পরে পরিমাপ করা হয়। দেখা যায়, সিস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৭.২৯ mmHg এবং ডায়াস্টোলিক ব্লাড প্রেসার ৩.৪২ mmHg কমেছে। গবেষকরা ধূমপান ও অন্যান্য ফ্যাক্টর বিবেচনায় নিয়ে ফলাফল যাচাই করেন এবং নিশ্চিত করেন যে রোজার কারণে এই পরিবর্তন হয়েছে।
রোজা মস্তিষ্কে বি.ডি.এন.এফ (Brain-Derived Neurotrophic Factor) নামক এক গুরুত্বপূর্ণ নিউরোট্রান্সমিটারের পরিমাণ বৃদ্ধি করে, যা নিউরনের বেঁচে থাকা, শেখার ক্ষমতা ও দীর্ঘমেয়াদী স্মৃতির উন্নতি করে। ২৯ জন রোজাদারের ওপর গবেষণায় দেখা যায়, রমজানের ১৪তম দিনে বি.ডি.এন.এফ-এর মাত্রা ২৫% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২৯তম দিনে এটি ৪৭% বেড়েছে।
২০১২ সালের একটি গবেষণায় ৫০ জন সুস্থ রোজাদারের প্রদাহ সূচক পরিমাপ করা হয়। রোজার শুরুতে, মাঝামাঝি এবং শেষে দেখা যায়, প্রদাহজনিত উপাদানগুলোর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। আরেকটি গবেষণায় ৬১ জন অতিরিক্ত ওজনধারী ব্যক্তির শরীরে রোজার প্রভাব পরীক্ষা করা হয়। দেখা যায়, প্রদাহ সৃষ্টি করা প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন কমেছে এবং প্রদাহ প্রতিরোধী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন বৃদ্ধি পেয়েছে।
রোজা শুধু আত্মসংযমের চর্চাই নয়, এটি হৃদরোগ, ব্লাড প্রেসার, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। গবেষণা বলছে, রোজা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে, তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখা জরুরি।
সূত্র:https://tinyurl.com/4sx6mpcx
আফরোজা