ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

জলবসন্ত সতর্ক থাকুন

ডা. ইমনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জলবসন্ত সতর্ক থাকুন

জলবসন্ত কী
চিকেনপক্স বা জলবসন্ত একটি পরিচিত ও ছোঁয়াচে রোগ। এটি সাধারণত ভ্যারিসেলা জন্টার নামের ভাইরাস থেকে হয়ে থাকে। যে কোনো বয়সের লোক এই জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে। তবে নবজাতক এবং ক্ষেত্রবিশেষ প্রাপ্তবয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগটির তীব্রতায় মৃত্যু আশঙ্কা থাকে। তবে রোগটি সাধারণত ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কখনো নিজ থেকে ভালো হয়ে যেতে দেখা যায়। তবে এই ভ্যারিসেলা জস্টার জীবাণুটি রোগীর দেহে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায় এবং পুনরায় সক্রিয় হয়ে হারপিস জাস্টার রোগের সৃষ্টি করে।
যেভাবে ছড়ায় : আক্রান্ত শিশুর সরাসরি সংস্পর্শে এলে, আক্রান্ত শিশুর থুথু, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে, আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রীর মাধ্যমে, গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে মা আক্রান্ত হলে গর্ভজাত শিশুও আক্রান্ত হতে পারে, শিশু প্রসব হওয়ার এক * সপ্তাহ আগে ও পরের সময় মা আক্রান্ত হলে নবজাতকের চিকেনপন্ন হতে পারে।
রোগের সুপ্তকাল : ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত রোগটি মানবদেহে সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র
খাবার : কুসুম গরম তরল খাবারসহ স্বাভাবিক যেকোনো খাবার বারবার নিতে হবে। ব্যথানাশক : প্যারাসিটামল জাতীয় সিরাপ দেওয়া যেতে পারে।
চুলকানি হলে : অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ অথবা ক্যালামাইন লোশন শরীরে ব্যবহার করতে হবে।
মুখগহ্বর : সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের সংক্রমণ : অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে হবে।
রোগের তীব্রতায় : (চামড়ায় প্রদাহ বেড়ে গেলে, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে) অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
সময়কাল : গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ঠাণ্ডার সময় এ রোগ বেশি দেখা দেয়। তবে মহামারির আকারে বছরজুড়েই এর বিস্তার দেখা যেতে পারে।
বিস্তারকাল : র‌্যাশ অথবা দানা ওঠার দুদিন। আগ থেকে শুরু করে দানাগুলো শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত।
লক্ষণ : সাধারণত ২-৮ বছরের শিশুদের বেশি হতে দেখা যায়। রোগটির সুপ্তকাল অতিক্রম করে প্রথম দিকে জ্বর, যা ১০০- ১০৬ ফা, পর্যন্ত ওঠে, ক্লান্ত লাগা, মাথাব্যথা, অরুচি, বমিভাব হতে দেখা যায়। তবে এক বছর বয়সের নিচের শিশুদের প্রাথমিক এই লক্ষণগুলো সাধারণত দেখা যায় না। এ ক্ষেত্রে সরাসরি প্রথম দিনেই র‌্যাশ অথবা লালচে দাগ চামড়ায় দেখা যেতে পারে। দানাগুলো প্রথম দিকে লালচে ভাব পরে উঁচু হয়ে পানি পূর্ণ হয়ে ৩/৪ দিন থাকার পর ঘোলাটে হয়ে যায়। শেষে দানাগুলো শুকিয়ে গিয়ে আলগা আবরণটি খসে পড়তে দেখা যায়। চামড়ার এই সংক্রমণ মাথা ও মুখমণ্ডল থেকে শুরু করে শরীরের বিভিন্ন স্থান যেমন বুক, পেট, হাত, পা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। একদিকে প্রথম দিকের দানাগুলো শুকাতে শুরু করলেও নতুন নতুন দানা শরীরের বিভিন্ন স্থানে উঠতে দেখা যায়। গড়পরতা এই দানাগুলোর সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০ পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ ক্ষেত্রে দানাগুলোর সংখ্যা ১০ থেকে ১ হাজার ৫০০ পর্যন্ত হয়ে থাকে। দানাগুলোয় প্রচণ্ড চুলকানি অনুভূত হয়। একই রকম পানিপূর্ণ দানা শরীরে ভেতরের বিভিন্ন স্থানে যেমন- মুখগহ্বর, জিহ্বা এবং চোখে দেখা যেতে পারে। চিকেনপক্সের টিকা দেওয়া থাকলে শতকরা ভাগ ক্ষেত্রে রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। তবে ওয়াইন্ড টাইপের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হলে টিকা দেওয়া থাকলেও রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সে ক্ষেত্রে রোগটির তীব্রতা কম হয়ে থাকে।
চিকেনপক্সের থেকে জটিলতা-
ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ত্বকে সংক্রমণ
শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ- নিউমোনিয়া
স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণ-এনকেফালাইটিস, সেরেবেলার এটাক্সিয়া
গর্ভজাত শিশুর স্নায়ুতন্ত্র, চোখ, হাত, পা ও চামড়ার গঠন ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে, গর্ভজাত ও মৃত শিশুর ও প্রসব হতে পারে।
প্রতিরোধ : চিকেনপক্স যেহেতু ছোঁয়াচে রোগ, তাই আক্রান্ত শিশুদের অন্য শিশুদের কাছ থেকে আলাদাভাবে রাখতে হবে। দুর্ভাগ্যের কথা যে, রাশগুলো চোখে পড়ার দু’একদিন আগে থাকতেই জলবসন্তের রোগজীবাণু ছড়াতে আরম্ভ করে। চিকেনপক্সের টিকা দিয়ে এ রোগের বিরুদ্ধে দীর্ঘকালীন প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলা সস্তব। ৯ মাস বয়সের পর থেকেই এই টিকা দেওয়া যায়। ১২ বছর পর্যন্ত একটি ডোজ ও ১২ বছরের বেশি হলে দুটি ডোজ (দুই সপ্তাহের ব্যবধানে) দিতে হয়। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দেওয়া উচিত।

লেখক : অধ্যাপক, শিশু বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। চেম্বার : আলোক হেলথ কেয়ার লিমিটেড মিরপুর ১০ ঢাকা। ফোন : ১০৬৭২

×