ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

২০২৯ সালের মধ্যে এইডস সংক্রমণ বাড়বে ৬ গুণেরও বেশি

প্রকাশিত: ২১:৩২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২০২৯ সালের মধ্যে এইডস সংক্রমণ বাড়বে ৬ গুণেরও বেশি

ছবি: সংগৃহিত

সোমবার জাতিসংঘের এইডস সংস্থা UNAIDS–এর প্রধান উইনি বিয়ানাইমা সতর্ক করেছেন যে, যদি আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এইডস কর্মসূচির সহায়তা বন্ধ করে দেয়, তাহলে ২০২৯ সালের মধ্যে নতুন HIV সংক্রমণের সংখ্যা ছয় গুণেরও বেশি বেড়ে যেতে পারে। এতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং রোগটির আরও প্রতিরোধী ধরন ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অ্যাসোসিটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিয়ানাইমা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এইচআইভি সংক্রমণের হার কমছে। ২০২৩ সালে মাত্র ১৩ লাখ নতুন সংক্রমণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যা ১৯৯৫ সালের তুলনায় ৬০% কম।

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন আমেরিকার সমস্ত বৈদেশিক সহায়তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন, তখন UNAIDS আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, ২০২৯ সালের মধ্যে নতুন সংক্রমণ ৮৭ লাখ-এ পৌঁছাতে পারে, এইডস-সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে ৬৩ লাখ হতে পারে এবং আরও ৩৪ লাখ শিশু অনাথ হয়ে যেতে পারে।

উগান্ডা থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিয়ানাইমা বলেন, “আমরা এই রোগের ব্যাপক বিস্তার দেখতে পাব। যদি আমেরিকা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করে এবং নেতৃত্ব বজায় না রাখে, তবে এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটাবে।” তিনি বলেন, “আমেরিকার এই সহায়তা বন্ধের ফলে অনেক দেশে আতঙ্ক, ভয় এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।”

কেনিয়ার এক অঞ্চলে ৫৫০ জন এইচআইভি কর্মী তাৎক্ষণিকভাবে চাকরি হারিয়েছেন, ইথিওপিয়ায় হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন। এতে এইচআইভি সংক্রমণ পর্যবেক্ষণের কাজ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বিয়ানাইমা জানান, কিছু দেশে এইচআইভি কর্মসূচির জন্য ৯০% তহবিলই আসে বহিঃসহায়তা থেকে, যার বেশিরভাগই আমেরিকার সহায়তা। কেবল উগান্ডা, মোজাম্বিক ও তানজানিয়ার জন্যই প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার আমেরিকার সহায়তা রয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা আমেরিকার সঙ্গে কাজ করতে পারি যদি তারা তাদের সহায়তার পরিমাণ কমাতে চায়, কিন্তু হঠাৎ করে এটি বন্ধ করা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।”

বিয়ানাইমা আরও বলেন, আমেরিকা যখন এইচআইভি মোকাবিলায় সাহায্য কমানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখনই একটি নতুন প্রতিরোধমূলক ওষুধ এসেছে, যা এইচআইভি সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকাতে পারে।

এই ওষুধটি লেনাকাপাভির নামে পরিচিত, যা বছরে দুইবার নিলেই নারীদের জন্য ১০০% কার্যকর এবং পুরুষদের ক্ষেত্রেও প্রায় একইভাবে কাজ করে।

এই ওষুধের ব্যাপক ব্যবহার এবং অন্যান্য প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এইডসকে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সমাপ্ত করা সম্ভব, বলেন বিয়ানাইমা।

তিনি উল্লেখ করেন, লেনাকাপাভির ওষুধটি আমেরিকান কোম্পানি Gilead তৈরি করেছে। "আন্তর্জাতিক সহায়তার ফলে একটি আমেরিকান কোম্পানি নতুন উদ্ভাবন করতে পেরেছে, যা তাদের জন্য কোটি কোটি ডলার লাভ বয়ে আনবে। একইসঙ্গে এটি বিশ্বজুড়ে নতুন সংক্রমণ প্রতিরোধেও সহায়তা করবে।"

তিনি বলেন, "আমরা আমেরিকা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে। এই সহায়তা দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক।"

তিনি আরও বলেন, "আমেরিকার বাজেটের মাত্র ১% এই বৈদেশিক সহায়তায় ব্যয় হয়। এত কম পরিমাণ অর্থের জন্য কেন এত বড় একটা সংকট তৈরি করা হচ্ছে?"

এখন পর্যন্ত কোনো দেশ বা দাতা সংস্থা আমেরিকার তৈরি করা শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে আসেনি। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে বলে জানান তিনি।

"মানুষ মারা যাবে, কারণ তাদের জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমি এখনো কোনো ইউরোপীয় দেশকে প্রতিশ্রুতি দিতে শুনিনি, তবে তারা মনোযোগ দিচ্ছে, কারণ তারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে," বলেন বিয়ানাইমা।

ইসরাত জাহান

×