![এক চিকিৎসকের যোগদান ইস্যুতে উত্তপ্ত নিনস হাসপাতাল এক চিকিৎসকের যোগদান ইস্যুতে উত্তপ্ত নিনস হাসপাতাল](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/p6-2-2502121857.jpg)
স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল (নিনস)
স্নায়ুবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক গুরুদাস মণ্ডলের চাকরিতে যোগদান ইস্যুতে উত্তপ্ত রাজধানীর জাতীয় স্নায়ুবিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল (নিনস)। হাসপাতালে দিনভর মহড়া, হাতাহাতি ও চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় বন্ধ নিয়মিত অস্ত্রোপচার। শুধু তাই নয়, কর্মচারী ও আউটসোর্সিং কর্মীদের দিয়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলমের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসকরা। তাদের দাবি, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার মদদপুষ্ট পরিচালক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক বদরুল আলম হাসপাতালটিতে স্বেচ্ছাচারিতা চালাচ্ছেন।
সরেজমিনে বুধবার দেখা যায়, এদিন সকালেই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। সহযোগী অধ্যাপক গুরুদাস ম-ল কাজে যোগ দিতে আসলে প্রতিবাদ করে অন্যান্য চিকিৎসকরা। এ নিয়ে বেশ হট্টগোলও হয়।
সকাল থেকে পরিচালকের দপ্তরের সামনে আউটসোর্সিংয়ের শ’খানেক কর্মীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদের সঙ্গে কথা বলার সময় কয়েকজন আনসার এসে পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় পেয়ে আনসাররা নিবৃত হলেও তাদের সঙ্গে থাকা সাদাপোশাকে কয়েকজন বাধা দেয়।
পরিচালকের রুমের সামনে নিয়মিত সিকিউরিটির বাইরেও আনসারদের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি শ’খানেক অতিরিক্ত যুবককে পরিচালকের রুমের সামনে দেখা গেছে। পরিচয় জিজ্ঞেস করলে বলেছেন, তারা সিকিউরিটি স্টাফ।
পরিচালকের সিকিউরিটির দায়িত্বে নিয়োজিত ওই স্টাফদের দুজন জানিয়েছেন, একজন ডাক্তার জয়েন করতে আসছে। পরিচালক মহোদয় জয়েন নেননি। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তাররা সবাই এসে পরিচালকের সঙ্গে এ বিষয়ে খারাপ আচরণ করেছে। যার কারণে আউটসোর্সিংয়ের স্টাফদের খারাপ লেগেছে। তারা এটার প্রতিবাদ করেছে।
পরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বেশ কিছু লোক মহড়া দিচ্ছেন, বিভিন্ন রুমে যাচ্ছেন। ওই সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের মিটিং হচ্ছে জেনে ৪০২ নম্বর রুমে গেলে দেখা যায়, সেটিও অবরুদ্ধ। দুই শতাধিক তরুণ রুমের সামনে অবস্থান করছে।
এরা কারা? জানতে চাইলে বাইরে থাকা এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এরা আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পরিচালকের নিজস্ব লোক। ডাক্তারদের শায়েস্তা করতে পাঠিয়েছেন পরিচালক।
পরে মোবাইল ফোনে নিনস শাখা ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক ডা. জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, ডা. গুরুদাস ম-ল স্বাচিপ করেন। তিনি জুলাই বিপ্লবের সময় শান্তি মিছিলেও অংশ নিয়েছেন। চার মাস আগে আমরা পাবনা বদলি করেছিলাম তাকে। পরিচালক দীন মোহাম্মদ সাহেব তাকে আবার নিয়ে আসছে। এটা তো তিনি ঠিক করেননি। তিনি নিজেও তো শান্তি সমাবেশে গিয়েছে, বক্তব্য দিয়েছে। ৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বাসায় গিয়েছে, তার পক্ষে অবস্থান জানান দিয়েছে।
এখন আবার তিনি এ রকম একটা অন্যায় কাজ করবে, এটা আমরা আশা করিনি। আমাদের এখানকার বিএনপি-জামায়াতসহ আওয়ামী লীগপন্থি ছাড়া সব ডাক্তার মর্মাহত হয়েছে। আমরা ৪০/৫০ জন ডাক্তার গিয়ে দীন মোহাম্মদ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছি। কেন আপনি এই কাজটা করলেন? এটা করে চলে আসার পর আমরা ৪০২ নম্বরে বসেছি।
তিনি বলেন, আমরা চলে আসার পর পরিচালক তার গেল ১০ বছরের মেয়াদে নিয়োগ পাওয়া আউটসোর্সিংয়ের কর্মীদের বলেছে, আমাদের শায়েস্তা করতে। তারা পুরো হাসপাতালে মহড়া দিয়েছে। মিছিল করেছে। এতে তাদের সামনে পড়েছে আমাদের দুজন ডাক্তার। তাদের মারধরও করা হয়েছে। সব ডাক্তার মিলে সামনে দাঁড়ানোর পর তারা পিছু হটছে।
ডা. জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, আমরা আউটডোর ও জরুরি সেবা চালু রেখেছি। ইনডোরের নিয়মিত অস্ত্রোপচার আপাতত বন্ধ রেখেছি। আমরা আরও বড় কর্মসূচিতে যেতে চাই না। পুরো শাটডাউন করার পক্ষে আমরা না। কিন্তু যদি প্রশাসন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণি দিয়ে চিকিৎসকদের হেনস্থা করে আমরা বাধ্য হব। আমাদের এখন দাবি, এই প্রশাসন অপসারণ করতে হবে। এরা হাসিনার দোসর।
আমরা তাদের চাই না। দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। পরিচালক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ ও যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম ম-লের অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় আমরা বড় কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, বর্তমান পরিচালক দীন মোহাম্মদ আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট একজন চিকিৎসক। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশে গিয়ে বক্তব্য রেখেছেন, এমনকি তিনি বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেও গালি দিয়েছেন।
এরপরও সেই দীন মোহাম্মদ অদৃশ্য ক্ষমতা বলে হাসপাতালের পরিচালক রয়ে গেছেন, যেখানে প্রায় অন্য সবগুলো হাসপাতালই ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। এতদিন চুপচাপ থেকে এখন আবার দীন মোহাম্মদ স্বাচিপের চিকিৎসকদের হাসপাতালে ফিরিয়ে আনছেন এবং গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের চিকিৎসকদের সঙ্গে নানারকম বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদে আজ (বুধবার) চিকিৎসকদের অবস্থান কর্মসূচি ছিল, সেখানে পরিচালক চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও আউটসোর্সিংয়ের লোকদের দিয়ে হামলা করিয়েছে। হামলায় বেশ কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক আহত হয়েছেন। এমনকি তারা আমাদের আরও কয়েকজন চিকিৎসককে রুমে আটকে রেখেছেন। আমরা দীন মোহাম্মদ ও জয়েন্ট ডিরেক্টর বদরুলের পদত্যাগ চাই।
চিকিৎসকদের দাবি, আওয়ামী লীগের সময়ে এই পরিচালক দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করেছেন। বিএনপি-জামায়াতপন্থি চিকিৎসকদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেছেন। স্বৈরাচার হাসিনার দোসর এ চিকিৎসক আর হাসপাতালের পরিচালক থাকতে পারেন না। তাই সব চিকিৎসক মিলে দীন মোহাম্মদ ও তার সব অপকর্মের সহযোগী ডা. বদরুলের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।