ছবিঃ সংগৃহীত
গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা শুধু মা নয়, শিশুর জন্যও উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা চিকিৎসকের অনুমোদন পেয়েছেন, তারা গর্ভাবস্থার চারটি পর্যায়েই ব্যায়াম করতে পারেন, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ, শক্তি বৃদ্ধি ও ব্যথা উপশমে সহায়ক।
গর্ভাবস্থায় ব্যায়ামের উপকারিতা
নিয়মিত ব্যায়াম করলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে, হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং প্রসব সহজ হয়। ব্যায়াম পেশি টোন করে, শক্তি ও সহনশীলতা বৃদ্ধি করে, যা প্রসবের সময় সহায়ক হতে পারে।
এছাড়াও, ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এটি এন্ডোরফিন নামক ‘হ্যাপি হরমোন’ নির্গত করে, যা মুড ভালো রাখে, স্ট্রেস কমায় এবং ঘুমের মান উন্নত করে।
প্রথম ত্রৈমাসিক (১-১২ সপ্তাহ)
এই সময়ে মর্নিং সিকনেস ও ক্লান্তি বেশি থাকলেও হালকা ব্যায়াম উপকারী।
কেগেলস: মূত্র থামানোর মতো করে পেলভিক ফ্লোরের পেশি সংকুচিত করুন ও ৩-৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
ক্যাট-কাউ: শ্বাসের সঙ্গে মেরুদণ্ড বাঁকানো ও সোজা করার ব্যায়াম।
মডিফাইড পুশআপ: হাঁটুর সাহায্যে পুশআপ করে বাহু ও কাঁধ শক্তিশালী করা।
ওয়াল সিট: পায়ের পেশি শক্তিশালী করতে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসার ব্যায়াম।
গ্লুট ব্রিজ: কোমর ও নিতম্বের শক্তি বাড়াতে মেঝেতে শুয়ে হিপস ওপরে তোলা।
বাইসেপ কার্ল: ডাম্বেলের সাহায্যে বাহুর পেশি শক্তিশালী করা।
পেলভিক টিল্ট: কোমরের নমনীয়তা বাড়াতে শুয়ে বা দাঁড়িয়ে কোমর সামনে-পেছনে ঝোঁকানো।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক (১৩-২৬ সপ্তাহ)
এ সময়ে অনেকের শক্তি ফিরে আসে, তাই ব্যায়ামের মাত্রা কিছুটা বাড়ানো যায়।
ক্যাল্ফ রেইজ: পায়ের পেশি ও ভারসাম্য উন্নত করতে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দেওয়া।
সাইড লায়িং লেগ লিফট: শুয়ে এক পা ওপরে ওঠানো, যা পায়ের পেশি দৃঢ় করে।
ট্রাইসেপ ডিপস: চেয়ারের সাহায্যে বাহুর পেছনের অংশ শক্তিশালী করা।
বার্ড ডগ: এক হাত ও বিপরীত পা প্রসারিত করে মূল পেশি শক্তিশালী করা।
স্ট্যান্ডিং পেলভিক টিল্ট: দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে পেলভিক টিল্ট করা।
তৃতীয় ত্রৈমাসিক (২৭-৪০ সপ্তাহ)
এই সময়ে ভারসাম্য রক্ষার জন্য হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং বেশি কার্যকর।
চাইল্ডস পোজ: কোমর ও পিঠের ব্যথা কমাতে মাটিতে হাঁটু গেড়ে সামনে ঝুঁকে যাওয়া।
গডেস পোজ: পায়ের পেশি শক্তিশালী করতে হাঁটু ভাঁজ করে বসা।
বেন্ট-ওভার রো: ডাম্বেলের সাহায্যে কাঁধ ও পিঠের পেশি দৃঢ় করা।
ল্যাটারাল স্ট্রেচ: কোমরের পাশের অংশের নমনীয়তা বাড়ানো।
ট্রাইসেপ কিকব্যাক: বাহুর পেছনের অংশের জন্য ডাম্বেল ব্যায়াম।
মডিফাইড প্ল্যাঙ্ক: হাঁটু টিকিয়ে রেখে প্ল্যাঙ্ক করা, যা পুরো শরীর শক্তিশালী করে।
চতুর্থ ত্রৈমাসিক (প্রসব পরবর্তী ১২ সপ্তাহ)
এই সময়ে ধীরে ধীরে ব্যায়াম শুরু করা উচিত।
বেলি ব্রিথিং: শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে পেটের পেশি পুনরুদ্ধার করা।
স্ট্যান্ডিং ফরোয়ার্ড বেন্ড: কোমরের ব্যথা উপশমে সহায়ক।
কর্স পোজ: শরীর ও মন শান্ত করতে শুয়ে গভীর শ্বাস নেওয়া।
সিট অ্যান্ড স্ট্যান্ড: বসা ও ওঠার ব্যায়াম, যা দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
কেগেলস: প্রসব পরবর্তী পেলভিক ফ্লোর পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পর শরীর সুস্থ রাখতে ও শক্তিশালী করতে এসব ব্যায়াম নিয়মিত করা যেতে পারে। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
রিফাত