সংগৃহীত
এলার্জি হলো দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন নির্দিষ্ট কোনো উপাদানের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীল হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তখন সৃষ্ট একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন ত্বকের এলার্জি, খাদ্যজনিত এলার্জি, ধুলাবালির কারণে শ্বাসকষ্টজনিত এলার্জি বা ঋতুবদলের কারণে হওয়া অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন।
এসব সমস্যা সমাধানে প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করতে পারে নিম পাতা, কাঁচা হলুদ ও আমলকি। প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করলে এলার্জির সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
নিম পাতার উপকারিতা
নিম গাছকে বলা হয় "প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক" কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। নিম পাতার বিশেষ কার্যকারিতা রয়েছে এলার্জিজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে।
ত্বকের এলার্জি দূর করতে কার্যকর: নিম পাতায় উপস্থিত শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান ত্বকের প্রদাহ কমায় এবং ফুসকুড়ি, চুলকানি ও র্যাশ দূর করতে সাহায্য করে। এলার্জির কারণে ত্বকে লালচে দাগ বা চুলকানি হলে নিম পাতার রস সরাসরি প্রভাবিত স্থানে ব্যবহার করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়।
রক্ত পরিশোধক হিসেবে কাজ করে: নিম পাতার রস নিয়মিত পান করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। এটি রক্ত পরিশোধন করে, যা এলার্জি প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে: নিম পাতায় থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে এলার্জিজনিত সমস্যা কম হয়।
ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক প্রতিরোধে সাহায্য করে: নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকজনিত সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, যা অনেক সময় এলার্জির কারণ হতে পারে।
কাঁচা হলুদের অসাধারণ গুণাগুণ
হলুদকে বলা হয় "প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক"। এতে থাকা কারকিউমিন নামক উপাদান প্রদাহরোধী ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা এলার্জি প্রতিরোধ ও নিরাময়ে অত্যন্ত উপকারী।
প্রদাহ দূর করে: এলার্জির কারণে শরীরে হওয়া প্রদাহ ও চুলকানি দূর করতে কাঁচা হলুদ অত্যন্ত কার্যকরী। নিয়মিত হলুদ সেবন করলে ত্বকের লালচে ভাব ও চুলকানি কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: কারকিউমিন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে দেহ সহজেই এলার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।
অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়: এলার্জির অন্যতম কারণ শরীরে অতিরিক্ত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস। কাঁচা হলুদে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই সমস্যা প্রতিরোধ করে এবং কোষের সুস্থতা বজায় রাখে।
বাতাসজনিত এলার্জি প্রতিরোধ করে: অনেক সময় ধুলাবালি বা ঋতু পরিবর্তনের কারণে শ্বাসকষ্টজনিত এলার্জি দেখা দেয়। কাঁচা হলুদ এই ধরনের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন কমাতে সাহায্য করে।
নিম, হলুদ ও আমলকি দিয়ে বড়ি তৈরির পদ্ধতি ও ব্যবহার
এই তিনটি উপাদান একসঙ্গে ব্যবহার করলে তা এলার্জির বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। বাড়িতে সহজেই নিম, হলুদ ও আমলকি দিয়ে বড়ি তৈরি করা যায়।
প্রস্তুত প্রণালী
নিম পাতা প্রস্তুত করা: তাজা নিম পাতা ভালোভাবে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন।
কাঁচা হলুদ প্রস্তুত করা: ২-৩টি কাঁচা হলুদ ভালো করে ধুয়ে ছোট ছোট টুকরো করে শুকিয়ে গুঁড়ো করে নিন।
আমলকি প্রস্তুত করা: ২-৩টি শুকনো আমলকি গুঁড়ো করে নিন।
সব উপকরণ মেশানো: এই তিনটি উপাদান সমপরিমাণে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে সামান্য পানি যোগ করে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন।
বড়িগুলো সংরক্ষণ করা: রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে নিলে বড়িগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যাবে।
ব্যবহারের নিয়ম
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ পানির সঙ্গে ১-২টি বড়ি গ্রহণ করুন।
রাতে শোবার আগে এক গ্লাস গরম দুধের সঙ্গে ১টি বড়ি খেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
নিম, হলুদ ও আমলকি বড়ির উপকারিতা
এলার্জিজনিত চুলকানি, ফুসকুড়ি ও র্যাশ দূর করে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও রক্ত বিশুদ্ধ রাখে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে দেহ সহজেই এলার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
হজমশক্তি উন্নত করে, যা খাবারজনিত এলার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শ্বাসকষ্টজনিত ও ধুলাবালিজনিত এলার্জির প্রকোপ কমায়।
নিয়মিত এই বড়ি গ্রহণ করলে এলার্জির সমস্যা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। তবে, যদি এলার্জির সমস্যা খুব বেশি তীব্র হয় বা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। প্রাকৃতিক এই উপাদানগুলোর সঠিক ব্যবহার করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হয় এবং এলার্জির সমস্যা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
সূত্র: https://tinyurl.com/7b4db6h
আফরোজা