ছবি: সংগৃহীত
দাঁতের চিকিৎসায় যুগান্তকারী সাফল্য পেলেন গবেষকরা। স্বল্প মাত্রার লো-পাওয়ার লেজার (LPL) থেরাপির মাধ্যমে দাঁতের স্টেম সেল সক্রিয় করে নতুন ডেন্টিন তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ডেন্টিন হলো দাঁতের মূল উপাদানগুলোর অন্যতম। এই গবেষণা ভবিষ্যতে দাঁতের রোগ ও ক্ষয় মোকাবিলায় কম খরচে, অ-আক্রমণাত্মক চিকিৎসার দুয়ার খুলতে পারে।
বর্তমানে দাঁতের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের জন্য চিকিৎসকরা বিভিন্ন নিষ্ক্রিয় উপাদান ব্যবহার করেন। তবে, এসব উপাদান সময়ের সঙ্গে কার্যকারিতা হারাতে পারে এবং প্রাকৃতিক দাঁতের সম্পূর্ণ কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারে না। ফলে, টিস্যু পুনরুৎপাদনের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে দাঁত মেরামত করার সম্ভাবনা নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডেন্টাল অ্যান্ড ক্রানিওফেসিয়াল রিসার্চ (NIDCR) এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, লো-পাওয়ার লেজার প্রয়োগ করলে দাঁতের স্টেম সেল সক্রিয় হয়ে নতুন ডেন্টিন তৈরি করতে পারে।
গবেষণাটি NIDCR ও অন্যান্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (NIH)-এর সহায়তায় পরিচালিত হয় এবং এর ফলাফল Science Translational Medicine জার্নালে প্রকাশিত হয়।
গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের মোলার দাঁতে ছোট গহ্বর তৈরি করেন এবং এক অংশে লেজার থেরাপি প্রয়োগ করেন, অন্য অংশে নয়। ১২ সপ্তাহ পর দেখা যায়, লেজার-প্রাপ্ত দাঁতে নতুন ডেন্টিন গঠিত হয়েছে।
ল্যাবরেটরির আরও পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়, লেজার থেরাপি Reactive Oxygen Species (ROS) উৎপন্ন করে, যা Transforming Growth Factor Beta (TGF-β) সক্রিয় করে। এই সংকেত প্রোটিন দাঁতের স্টেম সেলকে ডেন্টিন কোষে রূপান্তরিত করে।
গবেষকরা দেখেছেন, এই পদ্ধতি মানব স্টেম সেলের ক্ষেত্রেও কার্যকর হতে পারে। তবে ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে প্রয়োগের জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি ও সুনির্দিষ্ট লেজার নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রয়োজন হবে। গবেষক ড. ডেভিড মুনি বলেন, "এই প্রক্রিয়ায় কোনো কৃত্রিম উপাদানের প্রয়োজন নেই, তাই এটি দ্রুত ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে আনার সুযোগ রয়েছে। দাঁতের পুনর্জন্ম ঘটাতে পারলে এটি প্রতিস্থাপনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।"
এই গবেষণা ভবিষ্যতে দাঁতের ক্ষয় ও বিভিন্ন রোগের সহজ, সাশ্রয়ী ও কার্যকর সমাধান হিসেবে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: ন্যাশনাল ইন্সটিউট অব হেলথ
এম.কে.