ছবি: সংগৃহীত
শুকরের মাংস খাওয়ার ফলে এক ব্যক্তির শরীরে ভয়াবহ পরজীবী সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি নিউরোসিস্টিসারকোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন, যা মস্তিষ্কসহ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কৃমির লার্ভার বিস্তার ঘটায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সংক্রমণ শুধু কাঁচা বা অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা শুকরের মাংস খাওয়ার মাধ্যমেই নয়, দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে কৃমির ডিম গ্রহণের ফলেও হতে পারে। অপরিষ্কার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কারণে শরীরে ট্রাইকাইনোসিস ও সিস্টিসারকোসিসের মতো প্রাণঘাতী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিকিৎসকদের তথ্যমতে, আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সিটি স্ক্যান ও এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে তার মস্তিষ্কে কৃমির অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য অ্যান্টিপারাসিটিক ওষুধের পাশাপাশি প্রদাহ কমানোর জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর পরিস্থিতিতে অস্ত্রোপচার করেও পরজীবী অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধে মাংস অবশ্যই ভালোভাবে রান্না করা উচিত। বিশুদ্ধ পানি পান করা, পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং গবাদিপশুর স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করাও সংক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এদিকে, ধর্মীয় ও বৈজ্ঞানিক উভয় দিক থেকেই শুকরের মাংস খাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়। পবিত্র কুরআনে শুকরের মাংসকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, কারণ এতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের মাত্রা অত্যন্ত বেশি থাকে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতেও দেখা গেছে, শুকরের মাংস ক্যান্সারসহ বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুকরের মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত, ইউরোপের অনেক দেশেই এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, শুকরের মাংসে থাকা ট্রিচিনেলা স্পাইরালিস ও টিনিয়া সোলিয়াম নামক পরজীবী কৃমি মানুষের শরীরে ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
চিকিৎসকরা সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন, খাদ্যাভ্যাসে সচেতনতা বাড়িয়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে এ ধরনের ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এম.কে.