ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

NYU ল্যাংগোন হেলথ-এর নতুন গবেষণা

গর্ভাবস্থায় মায়ের অসুস্থতাই কি অটিজমের কারণ?

প্রকাশিত: ২১:০২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গর্ভাবস্থায় মায়ের অসুস্থতাই কি অটিজমের কারণ?

ছবিঃ সংগৃহীত।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ সময় ধরে অটিজমের সঠিক কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করে আসছেন। NYU ল্যাংগোন হেলথ-এর গবেষকরা গর্ভাবস্থায় মায়ের অসুস্থতার বিষয়টি তদন্ত করেছেন। দীর্ঘ দশক ধরে ব্যাপক গবেষণার পরও অটিজমের সঠিক কারণ এখনও রহস্যময়।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩৬ শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত হয়েছে, এটি একটি জটিল উন্নয়নগত অবস্থা যা পুনরাবৃত্তিমূলক আচরণ এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় সমস্যা দ্বারা চিহ্নিত। সম্প্রতি কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, গর্ভাবস্থায় মায়ের অসুস্থতা শিশুর মধ্যে অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

তবে NYU ল্যাংগোন হেলথ-এর নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে যে, "মায়ের ইনফেকশন, অবসাদ বা গর্ভাবস্থায় অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা" অটিজমের কারণ হতে পারে এমন "কোনও প্রমাণযোগ্য উপাত্ত" পাওয়া যায়নি। গবেষকরা বলেছেন, অটিজমের সঠিক কারণ সাধারণত জেনেটিক্স, দূষণের প্রতি এক্সপোজার এবং স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেসের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।

গবেষণার প্রধান লেখক মাগদালেনা জেনেকা জানিয়েছেন, “আমরা দেখেছি যে, মায়ের ইনফেকশন এবং শিশুর অটিজম ডায়াগনোসিসের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই,” তবে তিনি আরও বলেন, “তবে আমরা নির্দিষ্টভাবে বলতে পারি না যে, গর্ভাবস্থায় মায়ের ইনফেকশন অটিজমের কারণ নয়।”

অটিজমের জন্য বেশ কিছু জেনেটিক কারণ দায়ী হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি পরিবারের মধ্যে কেউ অটিজমে আক্রান্ত থাকে, তবে পরবর্তী প্রজন্মে এই ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কিছু পরিবেশগত উপাদান যেমন, মায়ের ইনফেকশন, মানসিক চাপ বা পুষ্টির অভাব, অটিজমের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে যে, পরিবেশে থাকা বিভিন্ন রাসায়নিক বা দূষণ শিশুদের অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

অনেকেই মনে করেন অটিজম আক্রান্ত শিশুর মেধা কম থাকে। তবে এটি একটি ভুল ধারণা। অটিজমের সাথে মেধার কোনো সরাসরি সম্পর্ক নেই; অটিজমের রোগীরা নানা মেধা ও প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। যদিও ছেলে শিশুর মধ্যে অটিজমের হার বেশি, তবে মেয়ে শিশুরাও অটিজমে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে তাদের উপসর্গ কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। অনেকেই ভাবেন যে, অটিজম আক্রান্ত শিশুর উন্নতি সম্ভব নয়। তবে সময়মতো চিকিৎসা, থেরাপি এবং সহায়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক শিশুই বেশ ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হতে পারে।

অটিজমের জন্য বিশেষ ধরনের থেরাপি যেমন, বেহেভিয়ারাল থেরাপি, সেশন থেরাপি, স্পিচ থেরাপি এবং অকুপেশনাল থেরাপি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব থেরাপি শিশুকে সমাজে সঠিকভাবে মিশতে এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন করতে সাহায্য করে। অটিজম আক্রান্ত শিশুর পরিবার এবং আশপাশের মানুষদের পক্ষ থেকে ভালবাসা, সমর্থন এবং সহানুভূতির প্রয়োজন। এটি শিশুটির মানসিক সুস্থতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। অটিজমের লক্ষণ সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যত তাড়াতাড়ি মডিফাইড প্ল্যান অনুসরণ করা হবে, তত ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্পেশাল এডুকেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে অটিজম আক্রান্ত শিশুর উন্নতির জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

অটিজম সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা এবং তার উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অনুসরণ করতে পারে এবং সমাজে তাদের স্থান অর্জন করতে সক্ষম হয়।

 

 

 

 

Faruk

×