সুস্থ থাকতে ও ডায়েট বজায় রাখতে আজকাল অনেকে বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফলের বীজ খেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা প্রায়শই ডিটক্স ওয়াটার বা পুষ্টিকর শুকনো ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। তেমনই এক আশ্চর্য ফল হলো কালো কিশমিশ। স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের অনেকেই কালো কিশমিশের পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছেন, তবে জানেন কি এই ছোট্ট ফলটির অসাধারণ উপকারিতা?
কালো কিশমিশ কীভাবে তৈরি হয়?
কালো কিশমিশ মূলত শুকনো আঙুর, যা ভারতে "মানুক্কা" নামেও পরিচিত। এটি সাধারণত বীজবিহীন আঙুরকে তিন সপ্তাহ রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয়। প্রক্রিয়াটির ফলে আঙুরের বাদামি রঙ কালোতে পরিণত হয় এবং এতে পুষ্টিগুণ আরও বৃদ্ধি পায়। এই ফলটি শুধু স্বাদেই অনন্য নয়, বরং স্বাস্থ্য উপকারিতার দিক থেকেও এক অনন্য রত্ন।
কালো কিশমিশের অসংখ্য উপকারিতা।প্রতিদিন কালো কিশমিশ খেলে শরীরে নানা ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। জেনে নিন এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা:
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কালো কিশমিশ প্রাকৃতিকভাবে উচ্চ মাত্রার দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় ফাইবারযুক্ত, যা অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এটি হালকা প্রকৃতির জোলাপ হিসেবে কাজ করে এবং অন্ত্রের ভিতরে মলকে নরম ও সহজে নির্গমনযোগ্য করতে সহায়তা করে। কালো কিশমিশ ভিজিয়ে খেলে এর ফাইবার সহজে হজম হয় এবং অন্ত্রের গতিবিধি স্বাভাবিক রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি, এটি অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা বাড়িয়ে হজম শক্তি উন্নত করে। নিয়মিত কালো কিশমিশ খাওয়া দীর্ঘমেয়াদে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমাতে পারে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, রক্ত বিশুদ্ধ করে: শরীর থেকে বিষাক্ত টক্সিন বের করে রক্ত পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে কালো কিশমিশ। এটি লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে, যা সুস্থ ত্বক ও ব্রণমুক্ত মুখ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা? কালো কিশমিশে থাকা উচ্চমাত্রার পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন সি ও বি সমৃদ্ধ এই ফল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয় এবং শরীরকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে: কালো কিশমিশ আয়রন ও কপার সমৃদ্ধ, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত খেলে লোহিত রক্তকণিকার পরিমাণ বাড়ে ও শরীর সতেজ থাকে।
ওজন কমাতে সহায়ক: প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকার কারণে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে ক্ষুধা কম লাগে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ঘুমের মান উন্নত করে: কালো কিশমিশে থাকা মেলাটোনিন ঘুমের সমস্যার সমাধান করে, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
অকাল বার্ধক্য রোধ করে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কালো কিশমিশ ত্বকের কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে, ত্বককে উজ্জ্বল ও তারুণ্যময় রাখে।
খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়: কালো কিশমিশে কোনো কোলেস্টেরল নেই বরং এটি এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: কালো কিশমিশে থাকা অ্যান্থোসায়ানিন, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনল মস্তিষ্কের কোষকে সুরক্ষিত রাখে ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক।
কিভাবে কালো কিশমিশ খাবেন?
কালো কিশমিশ খাওয়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খাওয়া। এতে ফাইবার আরও কার্যকর হয় এবং শরীরে সহজেই পুষ্টি শোষিত হয়।
এত ছোট্ট একটি ফল, অথচ এর উপকারিতা অসীম! সুস্থ থাকতে চাইলে আজ থেকেই আপনার খাদ্যতালিকায় কালো কিশমিশ যোগ করুন এবং উপভোগ করুন এর অসাধারণ স্বাস্থ্যগুণ!
সূত্র:https://tinyurl.com/mr3db3z3
https://tinyurl.com/5a538t4n
আফরোজা