পেটের চর্বি অনেকেই পছন্দ করেন না। স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও এটি ক্ষতিকর, কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে, তাদের বিভিন্ন রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে কীভাবে আমরা এই সমস্যা এড়াতে পারি? কীভাবে পেটের চর্বি জমা বন্ধ করা এবং কমানো সম্ভব? চলুন জেনে নিই পাঁচটি বৈজ্ঞানিক উপায়—
১. ট্রান্স ফ্যাট সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন
ট্রান্স ফ্যাট হলো একটি অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যা প্রক্রিয়াজাত খাবারে বেশি পরিমাণে থাকে। কেক, কুকিজ, ডালডা যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, ছয় বছর ধরে বাঁদরের ওপর চালানো এক গবেষণায় যেসব বাঁদরকে প্রচুর ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়ানো হয়েছিল, তাদের পেটের চর্বি ৩৩% বেড়ে যায়। ট্রান্স ফ্যাট হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। তাই খাদ্যতালিকা থেকে এই ধরনের ফ্যাট বাদ দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. স্ট্রেস কমানো অত্যন্ত জরুরি
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল নামের এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করে, যা অতিরিক্ত ক্ষুধার অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং পেটের চর্বি জমাতে সাহায্য করে। যাঁদের শরীরে কর্টিসলের মাত্রা বেশি, তাঁদের পেটের চর্বিও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে স্ট্রেসফুল পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। স্ট্রেস কমানোর জন্য সপ্তাহে এক বা দুই দিন এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়—যেমন অবসর সময় কাটানো, বিনোদনমূলক কাজ করা, খেলাধুলা, বা পরিবারের সাথে বাইরে ঘুরতে যাওয়া।
৩. চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার পেটের চর্বি জমার অন্যতম কারণ। এটি হৃদরোগ, ফ্যাটি লিভারসহ নানা জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি গ্রহণের ফলে ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যা পেটের চর্বি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বিশেষ করে কোক, ফান্টা, স্প্রাইটসহ বিভিন্ন সফট ড্রিঙ্কস সাধারণ মিষ্টি খাবারের তুলনায় বেশি ক্ষতিকর। কারণ এই পানীয়তে থাকা চিনির স্বাদ সরাসরি অনুভূত না হওয়ায় অজান্তেই বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। এছাড়া তরল চিনি সরাসরি শরীরে প্রবেশ করে দ্রুত জমতে শুরু করে, যা ব্রেনের জন্যও বিভ্রান্তিকর। তাই চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলাই উত্তম।
৪. ঘুমকে গুরুত্ব দিন
ঘুমের অভাব ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুমান, তাদের তুলনায় যারা ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান, তাদের ওজন দ্রুত বেড়ে যায়। ৬৮,০০০ মহিলাদের উপর ১২ বছর ধরে চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কম ঘুমান, তাদের মধ্যে স্থূলতার হার অনেক বেশি। তাই নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৫. সাদা কার্বোহাইড্রেট কমিয়ে দিন
সাদা ভাত, সাদা রুটি ইত্যাদি উচ্চমাত্রার রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট পেটের চর্বি জমার অন্যতম কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৫০ গ্রামের কম সাদা কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করলে পেটের চর্বি কমে যায়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি খুবই কার্যকরী। সাদা ভাত বা রুটির পরিবর্তে ব্রাউন রাইস, ব্রাউন রুটি বা হোল গ্রেন খাবার গ্রহণ করলে পেটে চর্বি জমার হার ১৭% কমে যায়।
পেটের চর্বি শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। তাই এটি কমানোর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম অত্যন্ত জরুরি। পেটের চর্বি কমাতে দ্রুত ফলাফল পেতে চাইলে উপরের নিয়মগুলো মেনে চলুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdzmndmx
আফরোজা