ছবি : সংগৃহীত
গর্ভাবস্থায় প্রথম থেকে তৃতীয় ত্রৈমাসিক যেকোনো সময়ে যোনিতে ব্যথা হতে পারে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও কখনো কখনো এটি গর্ভপাতের লক্ষণও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হরমোনজনিত পরিবর্তন, জরায়ুর চাপ বা অন্যান্য কারণ থেকে এই ব্যথা হতে পারে।
যোনিতে ব্যথার কারণ
গর্ভাবস্থায় যোনিতে ব্যথার কারণ ত্রৈমাসিক অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
প্রথম ত্রৈমাসিক
১. ইমপ্লান্টেশন ক্র্যাম্পিং: নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর দেয়ালে সংযুক্ত হওয়ার সময় মৃদু ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
২. হরমোনজনিত পরিবর্তন: প্রোজেস্টেরনের বৃদ্ধির ফলে পেলভিসে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
৩. সার্ভিক্সের সংবেদনশীলতা: জরায়ুর রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় সার্ভিক্স সংবেদনশীল হয়ে উঠে।
দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক
১.রাউন্ড লিগামেন্ট ব্যথা: জরায়ু বড় হওয়ার সঙ্গে লিগামেন্ট টান পড়ে, যা যোনিতে ব্যথার কারণ হতে পারে।
২. জরায়ুর চাপ: জরায়ুর বৃদ্ধি পেলভিক অঞ্চলে চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথা বাড়ায়।
৩. সার্ভিক্সে পরিবর্তন: সার্ভিক্স নরম ও প্রসারিত হওয়ার কারণে মৃদু ব্যথা হতে পারে।
তৃতীয় ত্রৈমাসিক
১. লাইটনিং ক্রচ: শিশুর অবস্থান নিচে নামার ফলে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
২. সার্ভিক্সের প্রসারণ: সার্ভিক্স পাতলা ও প্রসারিত হলে যোনিতে চাপ বা ব্যথা হতে পারে।
৩. যোনি ভেরিকোসিটি: রক্তপ্রবাহের বৃদ্ধি যোনিতে ভেরিকোস ভেইনের সৃষ্টি করে, যা ব্যথার কারণ হতে পারে।
যোনিতে ব্যথার জটিলতা
১. প্রি-টার্ম লেবার: গর্ভকাল ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
২. গর্ভপাত: প্রথম ত্রৈমাসিকে ব্যথার সঙ্গে রক্তক্ষরণ থাকলে গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকতে পারে।
৩. একটপিক প্রেগনেন্সি: নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাইরে সংযুক্ত হলে তীব্র ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৪. প্লাসেন্টাল অ্যাব্রাপশন: প্লাসেন্টা জরায়ুর দেয়াল থেকে আলাদা হয়ে গেলে মা ও সন্তানের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
যোনিতে ব্যথা কমানোর উপায়
১. পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম: পেলভিক মাংসপেশি শক্তিশালী করে চাপ কমানো যায়।
২. উষ্ণ সেক: হালকা গরম পানির ব্যাগ দিয়ে সেক দিলে ব্যথা উপশম হতে পারে।
৩. উষ্ণ গোসল: গরম পানিতে ১০-২০ মিনিট ডুব দিয়ে থাকলে ব্যথা কমে।
৪. অবস্থান পরিবর্তন: দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা এড়িয়ে চলুন এবং নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করুন।
৫. পানি পান ও পুষ্টিকর খাবার: পানি পান এবং আঁশযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পেলভিক অঞ্চলে চাপ কমে।
যদি ব্যথা তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ ব্যথার প্রকৃতি অনুযায়ী চিকিৎসক সঠিক সমাধান দিতে পারবেন।
মো. মহিউদ্দিন