এইচএমপিভি ভাইরাস (Human Metapneumovirus ev HMPV) এইচএমপিভি হলো এক ধরনের শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাস, যা মানুষকে সংক্রামিত করে। এটি সাধারণত ঠান্ডা-সর্দি থেকে শুরু করে শ্বাসকষ্টজনিত গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভাইরাসটি মূলত শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
কিভাবে ছড়ায়
এইচএমপিভি ভাইরাসটি সংক্রামিত ব্যক্তির মাধ্যমে ছড়ায়। ছড়ানোর প্রধান মাধ্যম হলো :
১. হাঁচি-কাশির ড্রপলেট : সংক্রামিত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে নির্গত ড্রপলেট বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে এটি অন্যের শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে।
২. সংক্রামিত পৃষ্ঠ : ভাইরাস আক্রান্ত পৃষ্ঠ যেমন দরজার হাতল, মোবাইল ফোন, বা অন্য কোনো বস্তু স্পর্শ করার পর হাত চোখ, মুখ বা নাকে লাগালে ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৩. কান্টাক্ট : সংক্রামিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এলে (যেমন হাত মেলানো বা চুম্বন) ভাইরাস ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
এইচএমপিভি সংক্রমণের লক্ষণ সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হলেও কখনো কখনো এটি গুরুতর হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো:
১. হালকা লক্ষণ:
ক. সর্দি
খ. কাশি
গ. নাক বন্ধ
ঘ. গলা ব্যথা
ঙ. হালকা জ্বর
২. গুরুতর লক্ষণ:
ক. শ্বাসকষ্ট
খ. ফুসফুসে সংক্রমণ (পোস্টমোনিয়া বা ব্রংকিওলাইটিস)
গ. বুকে চাপ অনুভব
ঘ. ক্রমাগত উচ্চ জ্বর
ঙ. খাবার গ্রহণে অনীহা (বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে)।
চিকিৎসা
এইচএমপিভি ভাইরাসের জন্য কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেই। এটি মূলত স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে সেরে ওঠে। তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়।
১. লক্ষণ উপশম:
ক. কাশি বা জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন।
খ. নাক বন্ধ থাকলে নাসারন্ধ্র পরিষ্কার করতে স্যালাইন ড্রপ ব্যবহার।
গ. শ্বাসকষ্টের জন্য বাষ্প গ্রহণ বা নেবুলাইজার ব্যবহার।
২. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পানীয়: শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।
৩. গুরুতর ক্ষেত্রে:
ক. হাসপাতালে অক্সিজেন থেরাপি।
খ. ফুসফুসের সংক্রমণের জন্য ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।
গ. ইমিউনোথেরাপি (জরুরি ক্ষেত্রে)।
প্রতিরোধ
১. নিয়মিত হাত ধোয়া।
২. সংক্রামিত ব্যক্তির কাছ থেকে দূরে থাকা।
৩. হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় মুখ ঢেকে রাখা।
৪. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা।
৫. শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
এইচএমপিভি ভাইরাস সাধারণত ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। তবে যদি লক্ষণগুলো গুরুতর হয়ে যায়, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
লেখক : জনস্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক ও গবেষক
চেয়ারম্যান - ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল। (দ্বিতীয় তলা) ধানমন্ডি আ/ এ, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭৮৭১০৬৭০২