ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৪ মাঘ ১৪৩১

ক্যান্সার প্রতিরোধে পাঁচটি জিনিসকে ‘না’ বলুন

প্রকাশিত: ০৮:১০, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০৮:১৩, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫

ক্যান্সার প্রতিরোধে পাঁচটি জিনিসকে ‘না’ বলুন

ড. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন ক্যান্সার প্রতিরোধে পাঁচটি জিনিসকে ‘না’ বলতে এবংপাঁচটি জিনিস সতর্কতার সাথে গ্রহণ করতে বলেছেন।

ক্যান্সার আজকের দিনে একটি ভয়ানক বাস্তবতা। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই রোগের সঙ্গে লড়াই করছে। তবে আমাদের জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনলে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। কিছু অভ্যাস ও জিনিস রয়েছে, যা এড়িয়ে চললে শরীরকে ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত রাখা যায়। নিচে ক্যান্সার প্রতিরোধে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি ‘না’ বলার কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

 

১. ধূমপান এবং তামাকজাত পণ্যকে ‘না’ বলুন

ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ। ফুসফুস ক্যান্সার ছাড়াও মুখগহ্বর, গলা, খাদ্যনালী, এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সারের সঙ্গে এগুলোর সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করা বা তামাক থেকে দূরে থাকা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর অন্যতম কার্যকর উপায়। একটি ভালো উদ্যোগ হতে পারে পেশাদার পরামর্শ বা সাপোর্ট গ্রুপের সাহায্য নেওয়া।

 

২. অস্বাস্থ্যকর খাবারকে ‘না’ বলুন

প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে প্রক্রিয়াজাত মাংস, যেমন সসেজ, বেকন, এবং হটডগ খাওয়ার সঙ্গে কোলন ক্যান্সারের সম্পর্ক রয়েছে। তাই তাজা শাকসবজি, ফলমূল, এবং আঁশযুক্ত খাবার খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। এই ধরনের খাবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি র‍্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।

 

৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণকে ‘না’ বলুন

অ্যালকোহল সরাসরি স্তন, লিভার, খাদ্যনালী এবং মুখগহ্বর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ শরীরে টক্সিন জমায়, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তাই অ্যালকোহল গ্রহণ সীমিত করা বা একেবারে পরিত্যাগ করাই ভালো।

 

৪. সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিকে ‘না’ বলুন

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (UV rays) ত্বকের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত রোদে থাকার কারণে মেলানোমা বা স্কিন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা, সূর্যের তীব্রতায় বাইরে না থাকা এবং দীর্ঘ সময় রোদে থাকার বদলে ছায়ায় থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

 

৫. নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনকে ‘না’ বলুন

পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম শরীরে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা স্তন, কোলন, এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন এড়িয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

এই পাঁচটি বিষয়ে ‘না’ বলার মাধ্যমে শুধু ক্যান্সারের ঝুঁকিই কমে না, বরং পুরো শরীর ও মনের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য এসব বদভ্যাস দূরে রেখে সচেতন ও ভারসাম্যপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।



 

ক্যান্সার প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা:

১. আঁশযুক্ত খাবার: আঁশ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি হজমের প্রক্রিয়া উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে, এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে সবজি, ফল, মটরশুঁটি, এবং শস্য থাকে।

২. পরিচ্ছন্নতা রক্ষা: দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক ও পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ক্যান্সার প্রতিরোধের একটি কার্যকরী উপায়। বিশেষ করে হাত ধোয়া, তাজা খাবার খাওয়া এবং পরিবেশে জীবাণু মুক্ত রাখা জরুরি।

৩. প্রাইভেট অর্গান পরিচ্ছন্নতা: যৌন অঙ্গ ও অন্যান্য প্রাইভেট অর্গান পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সঠিক পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে নানা ধরনের সংক্রমণ ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়।

৪. পিরিয়ডকালীন পরিচ্ছন্নতা: মাসিক সময়ে স্বাস্থ্যকর পরিচ্ছন্নতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্বাস্থ্যকর পরিচ্ছন্নতা জরায়ু এবং প্রজনন অঙ্গের বিভিন্ন রোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

৫. জরায়ু মুখের ক্যান্সার টিকা গ্রহণ: এই টিকা জরায়ু মুখের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য এই টিকা গ্রহণ অত্যন্ত কার্যকরী।

 

সতর্ক পদক্ষেপ ও সঠিক জীবনধারা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আমাদের দীর্ঘ, সুস্থ এবং আনন্দময় জীবনের পথ সুগম করে। এখন থেকেই সচেতন হন এবং নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি দায়িত্বশীল হোন।

আফরোজা

×