ছবি : সংগৃহীত
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস একটি পরিচিত অন্ত্রের ব্যাধি যা পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প, অতিসার, কোষ্ঠকাঠিন্যসহ বিভিন্ন উপসর্গ সৃষ্টি করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সমস্যায় ভুগলেও, এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও অজানা। ফলে, এটি পরিচালনা ও চিকিৎসা রোগী ও চিকিৎসকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আইবিএসের লক্ষণ
আইবিএসের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পেটে ব্যথা বা ক্র্যাম্প
- ঘন ঘন মলত্যাগ
- আলগা ও জলীয় মল
- পেট ফোলা বা ফুলে যাওয়া
- অতিরিক্ত গ্যাস
- কোষ্ঠকাঠিন্য
অনেক সময় ব্যথা মলত্যাগের পর কমে যেতে পারে। তবে রোগীদের পেট ফোলা, গ্যাস জমা এবং মলের মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বস্তি না পাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে, উপসর্গগুলো নিয়মিত থাকে আবার কখনো দীর্ঘ সময় কোনো সমস্যা থাকে না।
আইবিএস কেন হয়?
আইবিএস মূলত অন্ত্রের কার্যকারিতার ব্যাঘাত। এটি অন্ত্রের স্নায়ু বা পেশীর সমস্যার কারণেও হতে পারে। মানসিক চাপ, গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস, এমনকি অন্ত্রের নিম্ন মাত্রার প্রদাহ থেকেও আইবিএস হতে পারে।
আইবিএস নির্ণয়
আইবিএস নির্ণয়ের জন্য কোনো নির্দিষ্ট পরীক্ষা নেই। রোগ নির্ণয় মূলত লক্ষণ বিশ্লেষণ ও অন্যান্য রোগ বাতিলের মাধ্যমে করা হয়। চিকিৎসক সাধারণত রোগীর চিকিৎসা ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা এবং কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন।
ডায়াগনস্টিক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে:
- রক্ত পরীক্ষা
- মল পরীক্ষায় রক্তপাতের প্রমাণ
- সিগমায়েডোস্কোপি বা কোলনোস্কোপি
ডায়াগনোসিসে মানসিক চাপ ও মানসিক অবস্থা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
চিকিৎসা: ওষুধ ও পরামর্শ
আইবিএস পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব নয়, তবে এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়। চিকিৎসার পদ্ধতি:
- অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ: পেটের খিঁচুনি কমাতে সহায়ক।
- অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস: ব্যথা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে গ্রহণ করা উচিত।
- ডায়রিয়ার জন্য ওষুধ: লোপেরামাইড (ইমোডিয়াম) ও ডিফেনোক্সাইলেট কার্যকর।
জীবনযাত্রার পরিবর্তন
আইবিএস ব্যবস্থাপনার জন্য কিছু পরিবর্তন আনতে হবে:
- খাবারে পরিবর্তন: ক্যাফিন, চর্বিযুক্ত খাবার, দুগ্ধজাত পণ্য, এবং গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ফাইবার গ্রহণ: খাদ্যতালিকায় ফাইবার যোগ করুন যা কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে।
- তাপ প্রয়োগ: পেট ব্যথা কমাতে হিটিং প্যাড ব্যবহার করা যেতে পারে।
মনস্তাত্ত্বিক সহযোগিতা
যেকোনো মানসিক চাপ বা উদ্বেগ আইবিএস বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
আইবিএস নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মো. মহিউদ্দিন