ছবি সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে উচ্চ কোলেস্টেরল জনিত সমস্যা একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক কিছু বিশেষ ধরনের ওষুধ রয়েছে যা ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে, এসব ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত জরুরি।
স্ট্যাটিনস (Statins): স্ট্যাটিনস হলো কোলেস্টেরল কমানোর জন্য সবচেয়ে সাধারণ ও কার্যকরী ওষুধ। এটি লিভারের কোলেস্টেরল উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল (LDL) এর পরিমাণ কমায়। অ্যাটোরভাস্ট্যাটিন (Atorvastatin), রোসুভাস্ট্যাটিন (Rosuvastatin), সিমভাস্ট্যাটিন (Simvastatin) প্রভৃতি স্ট্যাটিনস ওষুধগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়।
ফাইব্রেটস (Fibrates): ফাইব্রেটস ওষুধগুলি রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে কার্যকরী। এটি বিশেষ করে সেই ব্যক্তিদের জন্য উপকারী, যাদের ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। গেমফাইব্রোজিল (Gemfibrozil) এবং ফেনোফাইব্রেট (Fenofibrate) এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ফাইব্রেটস। ফাইব্রেটস খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ভালো কোলেস্টেরল বা এইচডিএল (HDL) এর পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
বাইল অ্যাসিড সিকুয়েস্ট্রান্টস (Bile Acid Sequestrants): এই ধরনের ওষুধ বাইল অ্যাসিডের শোষণ কমিয়ে রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর কাজ করে। এটি রেজিন গ্রুপের ওষুধ এবং সাধারণত স্ট্যাটিনসের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ওষুধগুলোর মধ্যে কোলেস্টিরামিন (Cholestyramine) এবং কোলেস্টিপল (Colestipol) অন্যতম।
নায়াসিন (Niacin): নায়াসিন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। এটি বিশেষত উচ্চ কোলেস্টেরল সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। তবে, এটি ব্যবহারের সময় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন ত্বকে লালচে ভাব, হালকা ব্যথা এবং তাপ প্রবাহ। তাই এটি সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়।
ইজেটিমাইব (Ezetimibe): ইজেটিমাইব হলো এমন একটি ওষুধ, যা খাদ্য থেকে কোলেস্টেরল শোষণ কমায় এবং রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। এটি স্ট্যাটিনসের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে অথবা তার সঙ্গে মিলিয়ে। এটি এককভাবে ব্যবহারেও কার্যকরী হতে পারে।
কোলেস্টেরল কমানোর জন্য ব্যবহৃত যেকোনো ওষুধের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিটি ব্যক্তির শরীর আলাদা এবং তার চিকিৎসা প্রয়োজনও ভিন্ন। চিকিৎসক কেবল ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা বিবেচনায় রেখে সঠিক ওষুধ ও ডোজ নির্ধারণ করবেন।
কোলেস্টেরল কমাতে ব্যবহৃত ওষুধগুলোর বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন, পেশির ব্যথা, হজমজনিত সমস্যা, লিভারের কার্যকারিতা পরিবর্তন ইত্যাদি। তাই, প্রতিটি ওষুধ গ্রহণের আগে এবং পরে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি, ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ধূমপান পরিহার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে।
আশিক