আগের দিনে গম বা যব ভাঙিয়ে সেই আটাই খেত মানুষ। ধান থেকে ঢেঁকিতে ছেঁটে পাওয়া চাল ছিল খাদ্যতালিকায়। এরপর আস্তে আস্তে রিফাইন করা আটা ও চাল ধবধবে সাদা হয়ে উঠতে লাগল আর আমরা সেগুলোই খাই । চালের উপরের আবরণ ফেলে দিয়ে সেটি সরু করা হলে চালটির কিছু পুষ্টিগুণ কমে যায়।
চাল থেকে আমরা যে ভিটামিন বি পাই সেটি আসলে চালের আবরণ বা বাইরের অংশেই বেশি থাকে।তাই আবরণটি ফেলে দেয়া হলে চালে ভিটামিন বি এর পরিমাণ কমে যায়। চালের ভেতরের অংশে ভিটামিন বি বা থায়ামিনের পরিমাণ থাকলেও সেটি বেশ কম।
চাল সরু করার প্রক্রিয়ায় ইউরিয়া ব্যবহার করা হলে সেটি মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেন পুষ্টিবিদরা। ইউরিয়া হচ্ছে দেহের বর্জ্য পদার্থ। এটা যদি খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে সেটা ক্ষতির কারণ হয়।
পলিশ করা বা মসৃণ সাদা অথবা প্রক্রিয়াজাত মিনিকেট চাল এখন প্রায় সবাই গ্রহণ করছে। এ দুই ধরনের চালের গ্লাইসেমিক সূচক বেশ উচ্চমাত্রার (৭০-এর বেশি) গ্লাইসেমিক সূচক হলো খাদ্যের গুণগত মান, যার মাধ্যমে ওই খাদ্য গ্রহণ করার পর তা ভেঙে রক্তে গ্লুকোজ সরবরাহের দ্রুততার আপেক্ষিক মাত্রা পরিমাপ করা হয়। খাদ্য গ্রহণ করার দুই ঘণ্টার মধ্যে গ্লুকোজ সরবরাহের মাত্রার ওপর গ্লাইসেমিক সূচককে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো উচ্চমাত্রা (৭০ বা তদূর্ধ্ব), মধ্যম (৫৬ থেকে ৬৯) এবং নিম্ন (৫৫ বা এর কম)।
উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার বেশি সংখ্যক বার ও অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে দেহে গ্লাইসেমিক লোড বেড়ে যায়। ফলে ভোক্তা ধীরে ধীরে টাইপ ২ ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে ১ কোটিরও বেশি মানুষ এ রোগে আক্রান্ত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশে ১৯৯৫, ২০০০ ও ২০১০ সালে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪, ৫ ও ৯ শতাংশ। দেশে এখন যে হারে এ রোগের প্রকোপ বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে, ২০৩০ সালে তা দেড় কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিস্ময়ের বিষয় হলো, দেশের বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতা অত্যন্ত কম। এমনকি আক্রান্ত মানুষের ৫০ শতাংশেরও বেশি জানে না, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অথচ ডায়াবেটিসকে এখন অন্যান্য অনেক অসংক্রামক রোগ যেমন হূদরোগ, স্ট্রোক, বড়-ছোট রক্তনালির ক্ষতি, কিডনি সমস্যা, দৃষ্টি সমস্যা এমনকি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রশস্ত পথ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ডাক্তাররা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাধারণত নিম্ন গ্লাইসেমিক সূচকমান (৫৫ বা তার চেয়ে কম) সংবলিত খাবার গ্রহণের পরামর্শ দেন। লাল বা বাদামি চাল ডায়াবেটিস রোগীদের অন্যতম পথ্য হিসেবে বিবেচিত।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সচেতন মানুষের মধ্যে প্রক্রিয়াকৃত সাদা চালের পরিবর্তে এখন লাল চাল, বিশেষ করে পূর্ণ দানাদার লাল চাল বা ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাতের কদর করা উচিদ। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এ চালের কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া পূর্ণ শস্য লাল চাল এখন অটিজমে আক্রান্ত শিশুর খাদ্যতালিকায়ও রাখা দরকার।
মহি