ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

লিভারে টিউমার কেন হয়?

প্রকাশিত: ০৮:৪৫, ১১ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০৮:৫৬, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

লিভারে টিউমার কেন হয়?

আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার।বর্তমানে লিভারে টিউমার রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। অন্যান্য রোগের উপসর্গ সহজে বোঝা গেলেও লিভারে কিডনি রোগ সহজে বোঝা যায় না।

চলুন জেনে নিই লিভারে টিউমার হবার কারণ।অন্যান্য রোগের মতো লিভারে টিউমার সহজে ধরা পড়ে না এমনকি ব্যাথাও করে না।বেশিরভাগ সময় দেখা যায় অন্যান্য রোগের জন্য আলট্রাসোনোগ্রাম করতে গিয়ে লিভারে টিউমার ধরা পড়ছে।   

 

লিভার টিউমার: কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা

টিউমার দুটি ধরনের হতে পারে:

সৌম্য (নন-ক্যান্সার): এই ধরনের টিউমার সাধারণত ক্ষতিকারক নয় এবং প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সার): এই ধরনের টিউমার একাধিক ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার ফলে জীবন সংশয়ের ঝুঁকি থাকে।

লিভার টিউমারের কারণ

লিভারের টিউমারের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু কারণ এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এখানে কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:

হেপাটাইটিস বি বা সি সংক্রমণ: দীর্ঘস্থায়ী হেপাটাইটিস সংক্রমণ লিভার টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষত যদি সময়মতো চিকিৎসা না করা হয়।

ভারী অ্যালকোহল সেবন: অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন লিভার সিরোসিস এবং পরবর্তীতে লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD): এটি একটি অবস্থায় যেখানে লিভারে চর্বি জমে যায়, যা শেষ পর্যন্ত টিউমার বা ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে।

উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত লিভারের রোগ: কিছু লিভার সমস্যা, যেমন হিমোক্রোমাটোসিস (লিভারে অতিরিক্ত লোহা জমে যাওয়া) এবং উইলসন ডিজিজ (তামা জমে যাওয়া), লিভার টিউমারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

রাসায়নিক এক্সপোজার: কিছু বিশেষ রাসায়নিক, যেমন ভিনাইল ক্লোরাইড এবং আর্সেনিক, লিভার টিউমারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

ওবেসিটি এবং ডায়াবেটিস: অতিরিক্ত ওজন এবং ডায়াবেটিস লিভারের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে লিভার টিউমারের সম্ভাবনা থাকতে পারে।

 

লিভার টিউমারের লক্ষণ

প্রাথমিক পর্যায়ে লিভারের টিউমার বিশেষ কোনো লক্ষণ সৃষ্টি নাও করতে পারে। তবে টিউমারটি বৃদ্ধি পেলে, কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি: বিশেষ করে পেটের উপরের অংশে ব্যথা হতে পারে, যা কখনো কখনো আরও তীব্র হয়ে ওঠে।

জন্ডিস: ত্বক এবং চোখের সাদা অংশে হলুদ ভাব দেখা দেয়, যা লিভারের সমস্যার এক গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।

ক্ষুধা হ্রাস এবং ওজন কমে যাওয়া: টিউমার বাড়তে থাকলে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায়, যা ক্ষুধা হ্রাস এবং ওজন কমানোর কারণ হতে পারে।

ক্লান্তি: শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, যা সাধারণত টিউমারের উপস্থিতির একটি লক্ষণ।বমি বমি ভাব ও বমি: লিভারের সমস্যা থেকে আসা বমি বমি ভাব এবং মাঝে মাঝে বমি হওয়া।পেট বা পা ফুলে যাওয়া: লিভারের ব্যর্থতা বা টিউমারের কারণে পেটে পানি জমে ফুলে যেতে পারে।

বর্ধিত লিভার বা প্লীহা: লিভারের আকার বাড়তে থাকলে পেটের নিচের দিকে চাপ অনুভূত হতে পারে এবং এটি সাধারণত প্রাথমিক পর্যায়ে টিউমারের চিহ্ন।

 

লিভার টিউমারের চিকিৎসা

লিভার টিউমারের চিকিৎসা নির্ভর করে টিউমারের প্রকার এবং তার বিকাশের স্তরের ওপর। বেশ কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়:

সার্জারি: টিউমারটি যদি ছোট হয় এবং অন্যান্য অঙ্গগুলোতে ছড়িয়ে না পড়ে, তাহলে সার্জারি করে তা সরিয়ে ফেলা যেতে পারে।

কেমোথেরাপি: ক্যান্সারিজনিত ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের জন্য কেমোথেরাপি ব্যবহৃত হতে পারে, যা টিউমারের কোষকে ধ্বংস করে।

ইম্যুনোথেরাপি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার জন্য বিশেষ ধরনের থেরাপি, যা টিউমারের বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে।

লিভার ট্রান্সপ্লান্ট: যদি লিভার গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর না হয়, তবে লিভার প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।

সবশেষে,যদি আপনি লিভারের টিউমারের কোনো লক্ষণ অনুভব করেন বা যদি আপনার পূর্বে উল্লেখিত কোনো ঝুঁকির মধ্যে পড়েন, তবে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো চিকিৎসা নিলে লিভার টিউমার নিরাময়ে সফলতা পাওয়া সম্ভব।

আফরোজা

×