বর্তমানে শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। শিশুর মস্তিষ্ক প্রাকৃতিকভাবে অপরিণত এবং বিকাশমান থাকে, যা স্ক্রিনের আলো এবং অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছেন ডা: অদিতি চৌধুরী, শিশু বিশেষজ্ঞ।
তিনি বলছেন, মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করে, মনোযোগ কমায় এবং ঘুমের মানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। স্ক্রিনের নীল আলো ঘুমের হরমোন মেলাটোনিনের ক্ষরণ বাধাগ্রস্ত করে, ফলে শিশুদের ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ বাড়ে।
এছাড়া, মোবাইলের প্রতি এই আসক্তি শিশুদের শারীরিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ কমিয়ে দিচ্ছে, যা তাদের স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। একইসঙ্গে, অতিরিক্ত সময় স্ক্রিনে কাটানোর ফলে শিশুদের সৃজনশীলতা এবং সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা, তাদের সৃজনশীল এবং শারীরিক কার্যক্রমে উৎসাহিত করা এবং পরিবারের সঙ্গে মানসম্মত সময় কাটানোর ব্যবস্থা করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রযুক্তির ব্যবহার এ যুগে অপরিহার্য, তবে এর সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করাই হতে পারে শিশুদের সুস্থ বিকাশের চাবিকাঠি।
সমাধান ১: মোবাইল ব্যাবহার ধাপে ধাপে কমাতে হবে ।
মোবাইল ধীরে ধীরে অনেক বড় ক্ষতি করে।
মোবাইল ব্যবহার হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে শিশুরা বিরক্ত বা রেগে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে সময় কমিয়ে দিন এবং বিকল্প আকর্ষণীয় কাজের ব্যবস্থা করুন।
সমাধান ২: নিজ হাতে খেতে দেওয়া
শিশুকে মোবাইল দিয়ে খাওয়ানোর বদলে নিজ হাতে খাওয়ার অভ্যাস করান। এটি তাদের মনোযোগ ও হাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। মায়ের সাথে বাচ্চার চমৎকার আনন্দময় সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
সমাধান ৩: সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত করা
শিশুকে ছবি আঁকা, গান শোনানো, পাজল তৈরি বা অন্যান্য সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। এতে তাদের কল্পনাশক্তি বিকশিত হবে এবং স্ক্রিনের প্রতি আগ্রহ কমবে।
সমাধান ৪: মোবাইলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্ক বোঝোনো
মোবাইলের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বারবার সতর্ক করতে হবে ।
সমাধান ৫: ২ থেকে ৫ বছরের বাচ্চার মোবাইল ব্যবহার সর্বোচ্চ ১ ঘন্টা
এই বয়সী শিশুদের প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টার বেশি স্ক্রিন টাইম না দেওয়ার পরামর্শ দিন। তবে তা শিক্ষামূলক এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ হওয়া উচিত।
সমাধান ৬: ১৮ বছরের নিচে বাচ্চাকে মোবাইল কিনে দেয়া যাবেনা
১৮ বছরের নিচে শিশুদের ব্যক্তিগত মোবাইল কিনে না দেওয়ার চেষ্টা করুন। পরিবর্তে, পরিবারের জন্য একটি শেয়ার করা ডিভাইস ব্যবহার করুন এবং তদারকি করুন।
সমাধান ৭: রাত ১১টার পর বাসার সব ধরণের স্ক্রিন বন্ধ থাকবে
পরিবারের জন্য একটি নিয়ম তৈরি করুন যে রাত ১১টার পর সব ধরনের স্ক্রিন বন্ধ থাকবে। এটি শিশুরা যাতে ভালোভাবে ঘুমাতে পারে তা নিশ্চিত করে।
আফরোজা