আপনি কি কখনও ভেবেছেন, কেন আপনার শরীর থেকে কিছু একটা নির্গত হয়, যা আপনি স্রাব বলে জানেন? স্রাব বা শারীরিক তরল নির্গমন অনেক নারীর জীবনে একটি পরিচিত বিষয়, তবে এর সঠিক কারণ বা তা কি স্বাভাবিক, এই বিষয়ে প্রায়ই অনেক প্রশ্ন ঘুরে বেড়ায়। অনেক নারীই এই বিষয়টি নিয়ে লজ্জিত থাকেন বা সঠিক তথ্য না জানার কারণে উদ্বেগে থাকেন। অথচ, স্রাব শরীরের স্বাভাবিক এক প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর মধ্যে অনেক কিছুই সুস্থতার লক্ষণ। তবে যখন স্রাবের ধরণ বা পরিমাণ পরিবর্তিত হয়, তখন তা আমাদের শরীরের ভেতরের কোন না কোন পরিবর্তন বা অস্বাভাবিকতা হতে পারে।
আজকের এই আলোচনা আপনাকে শরীরের স্রাব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করবে, যা আপনাকে সচেতন হতে সাহায্য করবে এবং শরীরের পরিবর্তনগুলিকে সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম করবে। এখানে জানানো হবে, কখন আপনার স্রাব স্বাভাবিক এবং কখন এটি অসুস্থতার সংকেত হতে পারে। সঠিক সময়ে সচেতন হওয়ার মাধ্যমে আপনি শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারেন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন।
এতসব তথ্য জানার পর, আপনি আর কখনও স্রাবের কারণে অস্বস্তি বা উদ্বেগে থাকবেন না, বরং শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
স্বাভাবিক স্রাব সাধারণত সাদা বা স্বচ্ছ রঙের হয় এবং এর বিভিন্ন ঘনত্ব হতে পারে। এটি কখনও দইয়ের মতো, কখনও পাতলা বা দুধের মতো এবং কখনও আবার ডিমের সাদা অংশের মতো কিছুটা জেলির মতো হয়ে থাকে। সাধারণত এটি ২ থেকে ৫ মিলি পরিমাণে হতে পারে এবং অন্তর্বাসে বেশ কিছুটা আর্দ্রতা সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি যদি আপনার স্রাব একটু বেশি চলে, তাও স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু যদি স্রাবের পরিমাণ বা রঙ অস্বাভাবিক হয়ে যায়, তবে তা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
যেমন, সাদা স্রাবের রঙ যদি গারর ডার্ক বা হালকা হলুদ হয়ে যায়, বা তাতে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকে, তাহলে তা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। এটি সাধারণত অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দ্বারা সহজেই নিরাময় করা সম্ভব। আবার ধূসর বা ছাই রঙের স্রাব একটি অন্য ধরনের ইনফেকশন, যা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে। এর সাথে সাধারণত পচা মাংসের মতো দুর্গন্ধ থাকে, এবং এটি চিকিৎসা না করলে আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।
এছাড়া, যদি স্রাবের রঙ সবুজ বা হলুদ হয়ে যায় এবং সাথে তলপেটে ব্যথা বা প্রস্রাবের সময় অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে এটি গনোরিয়া রোগের লক্ষণ হতে পারে। এই ধরনের স্রাব যৌনবাহিত রোগ হিসেবে ছড়াতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে স্বামীকেও চিকিৎসা করাতে হবে।
মাসিকের রক্তের পর স্রাবের রঙ যদি লালচে বা কালচে হয়ে যায়, তবে তা সাধারণত স্বাভাবিক। তবে যদি মাসিকের বাইরে রক্তপাত হয়, বিশেষ করে ৪৫ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে, তাহলে এটি জরায়ু ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে, যা তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করলে আরও মারাত্মক হতে পারে।
তাহলে, স্রাব নিয়ে চিন্তা না করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি সুস্থ থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন, শরীরের প্রতি সচেতনতা এবং নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা আপনাকে সুস্থ রাখবে।
রিফাত