সন্তান নেওয়া জীবন পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা শুধু একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা নয়, বরং দায়িত্বশীলতার এক নতুন অধ্যায়। প্রতিটি বাবা-মা চান তাদের সন্তানের জন্ম হোক সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে। কিন্তু গর্ভধারণের আগে সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির অভাব অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার কারণ হতে পারে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, খাদ্যাভ্যাস, টিকা বা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা সন্তান নেওয়ার আগে জানা এবং মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভধারণের সঠিক প্রস্তুতি শুধু মায়ের স্বাস্থ্যই নিশ্চিত করে না, এটি সন্তানের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য ও বিকাশের দিকেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সময়ের এই সংবেদনশীল পর্যায়ে সামান্য অসাবধানতাও বড় সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা জরুরি।
এই লেখায় গর্ভধারণের আগে বাবা-মায়েদের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো, যা তাদের যাত্রাকে নিরাপদ এবং আনন্দময় করতে সহায়ক হবে। সন্তানের প্রতি মমত্ববোধ এবং সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার প্রথম পদক্ষেপ হতে পারে এই প্রস্তুতি।
১. ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট:
ফলিক অ্যাসিড গর্ভকালীন সন্তানের ব্রেন ও মেরুদণ্ডের সুস্থ গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভধারণের কমপক্ষে এক মাস আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করা উচিত। প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ সুস্থ সন্তানের জন্মে সহায়ক। তবে ডায়াবেটিস, খিঁচুনির ওষুধ সেবন বা পারিবারিক জন্মগত ত্রুটির ইতিহাস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডোজ নির্ধারণ করতে হবে।
২. টিকা:
হেপাটাইটিস বি এবং রুবেলার মতো টিকা নেওয়া গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। যারা ছোটবেলায় টিকা পাননি, তারা গর্ভধারণের আগে এই টিকা সম্পন্ন করতে পারেন। তবে কিছু টিকা গর্ভধারণের আগে নেওয়া দরকার এবং সেগুলোর পর এক মাস পর্যন্ত গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. রক্তস্বল্পতা দূর করা:
গর্ভকালীন রক্তস্বল্পতা বাচ্চার কম ওজন, প্রিম্যাচিওর জন্ম এবং মৃত বাচ্চা জন্মানোর ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গর্ভধারণের আগে রক্ত পরীক্ষা করে আয়রনের ঘাটতি থাকলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
৪. ভিটামিন ডি:
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি মায়ের হাড়, দাঁত এবং গর্ভের সন্তানের অঙ্গপ্রতঙ্গের গঠনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
৫. ক্যাফিন নিয়ন্ত্রণ:
অতিরিক্ত ক্যাফিন গর্ভপাত বা বাচ্চার কম ওজন নিয়ে জন্মানোর কারণ হতে পারে। তাই চা, কফি, চকলেট এবং সফট ড্রিঙ্কসের ক্যাফিন গ্রহণ সীমিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ:
গর্ভধারণের আগে উচ্চতা অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত বা কম ওজন উভয় ক্ষেত্রেই গর্ভাবস্থায় নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৭. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
ব্যালান্সড ডায়েট গ্রহণ করতে হবে, যাতে শাক-সবজি, ফলমূল, প্রোটিন এবং আঁশযুক্ত খাবারের ভারসাম্য থাকে। প্রসেসড এবং অতিরিক্ত তেল-চিনি-লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
৮. শরীরচর্চা:
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখে এবং গর্ভধারণের প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও কমায়।
৯. মানসিক প্রস্তুতি:
শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া উচিত।
১০. স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
গর্ভধারণের আগে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা যেমন ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, থ্যালাসেমিয়া, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক টেস্ট করানো উচিত। এর মাধ্যমে গর্ভকালীন জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে পরিকল্পনা করলে গর্ভাবস্থা এবং সন্তানের জন্ম আরও নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর হবে।
রিফাত