শীতকাল আমাদের দেশে একটি প্রিয় ঋতু। শীতের মৃদু রৌদ্র, কনকনে ঠান্ডা, মজাদার খাবার– সব মিলিয়ে একদম অন্য রকম আনন্দ। তবে শীতের এই আনন্দ সবসময় সবাই উপভোগ করতে পারেন না। অনেক মানুষ আছেন যাঁদের হাত-পা শীতের সময় একেবারে বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। এমন সমস্যা অনেকেরই হয় এবং এটি তাদের জন্য বেশ অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কেউ কেউ আবার এর সঙ্গে ব্যথার অনুভূতিও পেয়ে থাকেন। আসুন, শীতে হাত-পা ঠান্ডা হওয়া কেন হয়, এবং কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়, তা জানি।
*কেন শীতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়?
শীতকালে হাত-পায়ের ঠান্ডা হওয়ার কারণ মূলত রক্তপ্রবাহের অসামঞ্জস্য। সাধারণত শরীরে রক্ত প্রবাহিত হয় যা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু শীতের কারণে শরীরের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়, যার ফলে হাত এবং পায়ের রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং সেই অংশে ঠান্ডা অনুভূতি বেশি হয়। এই সমস্যাটি শুধুমাত্র বৃদ্ধদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে অনেক তরুণও এর শিকার হতে পারেন। তাই শীতকালে এই সমস্যা হলে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।
*হাত-পা গরম রাখার কার্যকর উপায় কী?
১. মোজা-গ্লাভস পরুন:
শীতের দিনে মোজা ও গ্লাভস পরাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে হাত-পায়ের তাপ বজায় থাকে। ভালো মানের গ্লাভস এবং মোজা পরুন যাতে ঠান্ডা না অনুভূত হয়।
২. তেল মালিশ করুন:
হাত-পায়ে সরষের তেল বা অন্য যে কোনো তেল মালিশ করতে পারেন। এটি রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে হাত-পায়ে গরম অনুভূতি প্রদান করবে। বিশেষ করে শীতের রাতে তেল মালিশ করা খুবই কার্যকর।
৩. ব্যায়াম করুন:
শীতকালে শরীর গরম রাখার অন্যতম উপায় হলো ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে শরীরের রক্তপ্রবাহ সচল থাকবে এবং ঠান্ডার অনুভূতি কমবে।
৪. হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন:
হাত-পায়ের তাপমাত্রা যদি খুব কমে যায়, তবে হিটিং প্যাড ব্যবহার করুন। এটি বিশেষ সময়েই কার্যকরী, তবে নিয়মিত না করলেও চলবে। সমস্যা বেশি হলে এই প্যাড ব্যবহার করে আরাম পান।
৫. আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান:
রক্তপ্রবাহ কম থাকলে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন শাকসবজি, মাংস, মাছ খাওয়া উচিত। আয়রন রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে, যা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৬. পর্যাপ্ত জল পান করুন:
শীতকালে তৃষ্ণা কম হলেও প্রচুর জল পান করা উচিত। শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখলে রক্তপ্রবাহ সুস্থ থাকে এবং শীতের সমস্যাগুলো কমে যায়।
*শেষ কথা:
এই উপায়গুলো প্রয়োগ করেও যদি হাত-পায়ের তাপমাত্রা না বাড়ে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কারণ এটি হতে পারে অন্য কোনো সমস্যার লক্ষণ, যা চিকিৎসকের দ্বারা ঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। তবে চিন্তার কিছু নেই, যেকোনো সমস্যারই সমাধান রয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা করালে দ্রুত সুস্থ হওয়া সম্ভব। তাই শীতে সতর্ক থাকুন, আর সুস্থ থাকুন।
রিফাত