শীতে বাতের ব্যথা বাড়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। শীতকালে তাপমাত্রা কমে গেলে আমাদের শরীরের পেশি ও জয়েন্টগুলো শক্ত বা কঠিন হয়ে যায়, যা রক্ত সঞ্চালনকে কমিয়ে দিতে পারে। এ কারণে জয়েন্টের ব্যথা এবং অস্বস্তি বাড়ে। বাতের রোগীদের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এছাড়াও শীতের আবহাওয়ায় বাতাসের আর্দ্রতার পরিবর্তন এবং বায়ুমণ্ডলের চাপের ওঠানামা জয়েন্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
শীতে বাতের ব্যথা বাড়ার কারণ:
১. রক্ত সঞ্চালনের হ্রাস : শীতকালে শরীরের রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যা জয়েন্ট ও পেশিতে শক্তভাব সৃষ্টি করে।
২. তাপমাত্রার প্রভাব : ঠান্ডা তাপমাত্রায় জয়েন্টের তরল পদার্থ ঘন হয়ে যায়, যা জয়েন্টের গতিশীলতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
৩. বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তন: বায়ুর চাপ কমলে জয়েন্টের চারপাশে থাকা টিস্যুগুলো ফুলে যেতে পারে, যা ব্যথা বাড়ায়।
৪. শারীরিক নড়াচড়ার কমতি: শীতে সক্রিয়তা কমে গেলে পেশি ও জয়েন্ট আরও দুর্বল হয়, ফলে ব্যথা বাড়তে পারে।
ব্যথা কমাতে করণীয় :
১. জয়েন্ট গরম রাখা:
ক. গরম পোশাক পরুন এবং প্রয়োজন হলে হট ওয়াটার ব্যাগ দিয়ে জয়েন্টে গরম সেঁক দিন।
খ. এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং পেশি শিথিল করে।
২. হালকা ব্যায়াম:
ক. প্রতিদিন হালকা স্ট্রেচিং ও ব্যায়াম করুন। এটি জয়েন্টের নমনীয়তা বাড়ায়।
খ. হাঁটা বা সাইক্লিং করার মতো নড়াচড়া জয়েন্টকে সচল রাখতে সাহায্য করে।
৩. গরম পানিতে গোসল:
ক্স গরম পানিতে গোসল করলে শরীর শিথিল হয় এবং ব্যথা কমে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ :
ক. অতিরিক্ত ওজন জয়েন্টের ওপর চাপ বাড়ায়, তাই স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৫. পুষ্টিকর খাবার :
ক. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (মাছ, বাদাম), ক্যালসিয়াম, ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান।
খ. জয়েন্ট ও হাড় শক্তিশালী রাখতে এই উপাদানগুলো সহায়ক।
৬. চিকিৎসা :
ক. তীব্র ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথানাশক ওষুধ বা ইনজেকশনের প্রয়োজন পড়তে পারে ।
যারা বিভিন্ন বাতরোগে ভুগছেন যেমন- রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, এনকাইলোজিং স্পডাইলাইটিস বা স্পাইনল আর্থোপ্যথি ইত্যাদি রোগের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিএমআরডি জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন পড়তে পারে এছাড়া যারা গাউটি আথ্রাইটিসতে আক্রান্ত তাদের এলুপিরিনল বা ফেবুস্টেট জাতীয় ওষুধ ও উচ্চপ্রোটিন জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।
কিছু সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন পড়তে পারে যেমন- গ্লুকোসামিন, কন্ড্রোটিন সালফেট, এম এস এম, হায়ালোরনিক এসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি ইত্যাদি, যা জয়েন্টের ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ কমায় পাশাপশি জয়েন্টের অভ্যন্তরীণ সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বাড়াতে সাহায্য করে। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা- দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার ক্ষেত্রে ওষুধের পাশপাশি ফিজিওথেরাপি খুবই কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি, কারণ ব্যথানাশক ওষুধ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার করা স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর তাই ব্যথা বা প্রদাহ কমাতে ফিজিওথেরাপি খুবই গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
৭. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন :
ক. সঠিক ভঙ্গিতে বসা এবং শোয়া অভ্যাস করুন।
খ. জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ এড়াতে ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন।
বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপির পরামর্শ ও শীতে নিয়মিত যত্ন এবং সচেতনতা বজায় রাখলে বাতের ব্যথার কষ্ট নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল ধানমন্ডি,আ/এ,ঢাকা ।
মোবাইল : ০১৭৮৭-১০৬৭০২