এই সময়ে কারও জ্বর হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভাবতে থাকেন ডেঙ্গু জ্বর নয়তো। এখনকার ভাইরাস জ্বরেও তাপমাত্রা ১০৪/১০৫ হতে পারে। তাই জ্বর হলে শুরুতেই আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। বেশি জ্বর মানেই প্রধানত ভাইরাস। ভাইরাস জ্বর প্রথম দিকে খুব বেশি হলেও পরে তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়। আর যেই জ্বর অনেকদিন ধরে থাকে, একটু একটু থাকে, সেগুলো কিন্তু ধরতে সময় লাগে। সারতেও সময় লাগে। তাই জ্বর হলে একনাগারে তিন দিন থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে এবং লক্ষণ অনুযাযী বেশ কয়েকটি পরীক্ষা করতে হবে।
কোন্ জ্বরে কেমন ব্যথা
চিকুনগুনিয়ায় জ্বর সঙ্গে গিঁটে ব্যথা তো খুব সাধারণ বিষয়। ব্যথা সহ্য করা কষ্টকর হয়। হাঁটতেই পারে না। বাঁকা হয়ে হাঁটে। আর ডেঙ্গুতে কিন্তু গিঁটে ব্যথা হয় না। তবে শরীরে ব্যথা হয়। রোগীরা আলাদা করে বোঝে না। সারা শরীরে ব্যথা হয়। ডেঙ্গুতে কিন্তু কোমরে খুব ব্যথা হয়। এ ব্যথাকে ব্র্যাকবোন ফিবার। এত ব্যথা হয়, মনে হয়, কোমর ভেঙে যাচ্ছে। আর চিকুনগুনিয়ায় বিভিন্ন গিঁটে ব্যথা হয়। হাঁটুতে ব্যথা হয়। কোমরে ব্যথা হতে পারে। বিভিন্ন বড় বড় গিঁটে ব্যথা হতে পারে।
ডেঙ্গু সাত আটদিন পরে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু চিকুনগুনিয়ার সমস্যা হলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে জয়েন্টে ব্যথা রয়ে যেতে পারে। তিন থেকে চার সপ্তাহ থাকতে পারে। এমনকি এর বেশি সময় ধরেও থাকতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার পরও ব্যথা হয়। এটি হলো চিকুনগুনিয়ার বৈশিষ্ট্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বহুদিন ব্যথা থাকতে পারে। জ্বর থাকবে না। অত্যধিক গায়ে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। গায়ে ব্যথা হলে যে সমস্যা দেখা দেয় তা হলো শরীরের নানা অংশে প্রবল ব্যথা ও যন্ত্রণা হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে শরীর দুর্বল লাগে। কোনো কাজ করতে ইচ্ছে করে না। মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, অবসাদ লাগে। গায়ে ব্যথার কারণে শরীরের তাপমাত্রাতেও হেরফের দেখা দিতে পারে।
গায়ে ব্যথা হলে করণীয়
জ্বরের সঙ্গে ব্যথা থাকলে এমনিতেই শরীর ক্লান্ত দূর হয়ে যায়। এর জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সারাদিনে অন্তত ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ঘুম কম হলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলেও ক্লান্তি দেখা দেয়। এর ফলে সারা শরীরে ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়। এছাড়া জ্বরের ফলে শরীরের অনেক ঘাম হয়। অনেকে তেমন একটা খেতেও পারেন না। অথচ পানির ঘাটতি তৈরি হয়।
শরীর ডিহাইড্রেড হয়ে পড়ে। ফলে শরীরের ব্যথার তীব্রতা তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে অন্য সময়ের থেকে এক থেকে দেড় লিটার পানি ও পানীয় খাওয়া বাড়িয়ে দিতে হবে। শরীর থেকে যতবেশি টক্সিন বের করে দেওয়া যাবে ততই শরীরের ব্যথা কমবে। হালকা ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজও করতে পারেন। ব্যথার তীব্রতা বেশি হলে সাধারণ প্যারাসিটেমল ট্যাবলেট খাওয়া যেতে পারে। তবে, অত্যধিক এবং এক নাগাড়ে ব্যথা যন্ত্রণা হতে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।