পরিণত বয়সের নারী-পুরুষ উভয়ের কাছে যে সমস্যা অনেক প্রকট হয়ে উঠেছে তা হলো পুরুষের শারীরিক দুর্বলতা বা অক্ষমতা। এ কারণে অনেক দম্পতি মানসিক অশান্তিতে ভোগেন। অনেক অবিবাহিত এমনকি যৌন ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেননি এমন অনেকেও এ সমস্যা নিয়ে এখন চিকিৎসকের কাছে ছুটছেন। আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষেরই এ বিষয়ে সংকোচ ও সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে প্রকৃত তথ্য থেকে অনেকে বঞ্চিত হন, এমনকি বহু সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে এমনকি পরকীয়ার মতো জঘন্য কাজেও আসক্ত করে তুলেছে। এর পরামর্শ নিতে নারী-পুরুষকে কুসংস্কার সমাজে বাসা বেঁধে আছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যৌন দুর্বলতায় নারী বা পুরুষ উভয়েই আক্রান্ত হতে পারেন তবে যৌনকাজে নারীর ভূমিকা অনেকখানি পরোক্ষ বিধায় পুরুষকেই এ সমস্যা নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়। সন্তোষজনক যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা, হতে পারে অপর্যাপ্ত পুরুষাঙ্গ উত্থান অথবা দ্রুত বীর্য স্খলনের কারণে। আমেরিকার ম্যাসাচুয়েটস স্টাডিতে দেখা যায় প্রায় ৫২ শতাংশ চল্লিশোর্ধ পুরুষই যৌন অক্ষমতায় ভুগছেন। আমাদের দেশের অবস্থা আরও ভয়াবহ। তিরিশের পরেই অনেক পুরুষই এই দুরবস্থার শিকার।
কারণ
মনোদৈহিক : দীর্ঘদিন মানসিক সমস্যায় থাকলে এরকম হতে পারে।
অর্গানিক : স্নায়ুবিক হরমোন সংক্রান্ত ও রক্ত সঞ্চালনে অপর্যাপ্ত এবং কবিরাজি বা ফার্সিতে নিজে নিজে ওষুধ সেবনের কারণে।
মিক্সড : অর্গানিক ও মনোদৈহিক কারণে যৌন অক্ষমতা হতে পারে।
কেন হয়
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন : দৈহিক শ্রম ও ব্যায়াম, ওজন কমানো, চর্বিযুক্ত ও অধিক ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার, রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ।
ওষুধের ফলে : কিছু কিছু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, ডিপ্রেশনের ওষুধ, ঘুমের ঔষধের কারণে যৌন অক্ষমতা তৈরি হতে পারে।
মনোজৈবিক
চিকিৎসা:
তিরিশের নিচের বয়সে অনেকের এরকম হতে পারে। অজ্ঞতার কারণে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে লভ্য ওষুধ, এমনকি গাছ-গাছড়া সেবন করে সমস্যা আরও বাড়িয়ে ফেলেন।
হরমোন থেরাপি :
চল্লিশোর্ধ পুরুষের, অক্ষমতার পাশাপাশি থাকে ডিপ্রেশন,স্মরণশক্তি হ্রাস, স্বাস্থ্যহানি অথবা ভুড়িবৃদ্ধি, হাড় ক্ষয়, দৈহিক লোমের পরিবর্তন, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি। তখন প্রয়োজন অনুযায়ী হরমোন প্রয়োগ করতে হয়। সকওয়েব এর মতো আধুনিক থ্যারাপিও রয়েছে। তবে মনে রাখবেন বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ছাড়া হরমোন থেরাপি কোনোভাবেই নেওয়া যাবে না।
চিকিৎসা:
যৌন দুর্বলতার চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের কারণের ওপর। পুরুষাঙ্গের উত্থানের সমস্যা যদি কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে হয় তাহলে অবশ্যই ওই রোগের চিকিৎসা করাতে হবে। তবে সচরাচর এ রোগের জন্য কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয় তার একটি হলো সিলডেনাফিল (ঝরষফবহধভরষ), যা অনেকের কাছেই ভায়াগ্রা নামে পরিচিত। এছাড়া এনড্রোজেন জাতীয় হরমোন এবং পুরুষাঙ্গের অভ্যন্তরস্থ মূত্রনালিতে প্রয়োগ করা হয় এমন কিছু ওষুধও রয়েছে। অপারেশনের মাধ্যমে পুরুষাঙ্গে বিভিন্ন ধরনের প্রসথেসিস (চৎড়ংঃযবংরং) স্থাপন করেও এ সমস্যা থেকে স্থায়ী পরিত্রাণ পাওয়া যায়। চর্ম যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ইউরোলজিস্ট সার্জনরা এ প্রসথেসিস লাগিয়ে থাকেন। পুরুষাঙ্গের উত্থানের সমস্যা বলতে অনেকে আবার দ্রুত বীর্যস্খলনকেও বুঝে থাকেন। একে বলা হয় প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন (চৎবসধঃঁৎব বলধপঁষধঃরড়হ)। এটি ভিন্ন একটি সমস্যা, এর চিকিৎসাও ভিন্ন।
যারা ওষুধ খেতে পারবেন না:
নির্দিষ্ট ফসফোডাইস্টারেজ-৫ বিরোধী ওষুধ (সিলডেনাফিল), ভার্ডনাফিল, টাডালাফিল) এখন পুরুষদের পছন্দের ওষুধ। এই ওষুধগুলো নানান বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুষাঙ্গের ক্যাভারর্নাস টিসুতে রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং প্রয়োজনের মুহূর্তে পুরুষাঙ্গকে শক্ত করে তুলে। কিন্তু এসব ওষুধের মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে। সবার জন্য এই ওষুধ নিরাপদ নয়। এমনকি হার্ট এ্যাটাকও হতে পারে এমন কিছু ওষুধ সেবনের পরে।
যারা হার্টের জন্য নাট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ খান। বুকের ব্যথা উঠে, অথবা যাদের হার্টফেইলিওর আছে, অথবা সম্প্রতিক বুকে ব্যথা (গ.ও) হয়েছে অথবা যাদের অনিয়ন্ত্রিত হ্রদস্পন্দন আছে। অথবা যাদের নিম্ন রক্তচাপ (৯০/৫০) অথবা উচ্চ রক্তচাপ আছে। যাদের স্ট্রোক হয়েছে তারা এসব ওষুধ খেতে পারবেন না।
সতর্কতা :
ধূমপান, মদপান ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। মানসিক ট্রেস কমাতে হবে, উপযুক্ত পরিবেশ ও জীবন সঙ্গী-সঙ্গিনী নির্বাচনে সচেষ্ট হতে হবে। পরস্পর আন্তরিক বোঝাপড়া করতে হবে। চিকিৎসকের এর পরামর্শ ছাড়া বাজারে বা ফার্সিতে আজেবাজে মেডিসিন খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী
মেডিক্যাল কলেজ।
চেম্বার : চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট ত্বক-চর্ম-যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ, জাহেদ হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সেন্টার লি: সাবামুন টাওয়ার, (ষষ্ঠ তলা) পান্থপথ মোড়, পুলিশ বক্সের পাশে। ঢাকা। মোবাইল : ০১৫৬৭৮৪৫৪১৯, ০১৭৩০৭১৬০৬০