ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

শিশুর জন্য কখন গরুর দুধ নিরাপদ?

প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২০ নভেম্বর ২০২৪

শিশুর জন্য কখন গরুর দুধ নিরাপদ?

ছবি: সংগৃহীত

আপনি হয়তো ভাবছেন “গরুর দুধে তো অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। ছয়মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্য শক্ত খাবার তাকে যখন দিচ্ছিই, তাহলে গরুর দুধ খাওয়াব না কেন?” আসলে আপনার সোনামণির পরিপাকতন্ত্র গরুর দুধ হজমের জন্য প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় লাগে। তাছাড়া এসময়ে তার ঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণও এতে যথেষ্ট পরিমাণে থাকে না। এটা মনে রাখতে হবে যে প্রথম ছয় মাস আপনার সোনামণির জন্য শুধুমাত্র বুকের দুধই যথেষ্ট। এ সময়ে ওর জন্যে আর কোনও খাবার বা পানীয়ের প্রয়োজন নেই, এমনকি একফোঁটা পানিও না। ছয়মাস বয়সের পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার তাকে দিতে হবে। তবে এই বাড়তি খাবার হিসেবে গরুর দুধ তাকে দিতে হলে আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকস-এর মতে তার বয়স এক বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিৎ।

কেন এর আগে তাকে গরুর দুধ খাওয়ানো ঠিক হবে না জেনে নেয়া যাক তার কারণগুলো-


১ বছরের চেয়ে ছোট বাচ্চাদের গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত না কারণ গরুর দুধে যে পরিমাণ আমিষ থাকে তা হজম করার ক্ষমতা ১ বছরের কম বয়সী শিশুর তৈরি হয়না। এছাড়া জন্মের প্রথম বছরে শিশুর বিকাশের জন্য ভিটামিন ই, জিংক এবং আরো কিছু পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন যেগুলো বুকের দুধ এবং ফরমুলায় থাকে কিন্তু গরুর দুধে থাকে না।

বাজারে ফরমুলা দুধের ঘাটতির সময় শিশুর দুধের চাহিদা মেটানোর ব্যাপারে দি আমেরিকান একাডেমি অফ পিডিয়াট্রিক্স(এপিপি) ২০২২ সালের মে মাসে পরামর্শ দেয় যে, বাজারের ফরমুলা দুধ পাওয়া না গেলে ৬ মাস বা তার চেয়ে বড় শিশুদের গরুর দুধ খাওয়ানো যেতে পারে কারণ ঘরের বানানো দুধের তুলনায় গরুর দুধ ভালো কাজে দেয়। 

তবে, ১ বছরের চেয়ে ছোট বাচ্চাকে নিয়মিত গরুর দুধ খাওয়ার অভ্যাস করানো একেবারেই উচিত না। এ বিষয়ে প্রয়োজনে শিশুর ডাক্তারের সাথে আগে কথা বলে নিন।

গরুর দুধে কিছু পুষ্টিগুণের অভাব থাকলেও প্রোটিন বা আমিষ থাকে খুবই বেশি পরিমাণে। আর সেটা তার জন্য হিতে বিপরীত হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষতঃ এতে সাথে ক্যাসিন-এর পরিমাণ মায়ের দুধের তুলনায় ছয় থেকে সাত গুণ পর্যন্ত বেশি থাকতে পারে। এই অতিরিক্ত ক্যাসিনের উপস্থিতির কারণে গরুর দুধ তার সহজে হজম হয়না। ফলে পেটফাঁপা বা বদহজমের মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া গরুর দুধের প্রোটিন তার জন্য আরও কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন অ্যালার্জির সমস্যা কিংবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়ার মত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

অনেক গবেষণায় আবার এও দেখা গেছে যে খুব অল্প বয়স থেকে শিশুকে গরুর দুধ দিলে পরবর্তীতে তার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায় – বিশেষতঃ যদি পরিবারের অন্য কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে। তাছাড়া গরুর দুধে প্রোটিন ও সোডিয়ামের অতিরিক্ত মাত্রা তার কিডনীর ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

গরুর দুধ-কে একটি ভাল সুষম ডায়েট-এর অংশ হিসাবে 12 মাস বা তার বেশি বয়সে শিশুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তবে, এটিকে কখনই শিশুদের পুষ্টির প্রাথমিক উৎস হিসাবে বুকের দুধ বা ফর্মুলা দুধের সঙ্গে প্রতিস্থাপন করা উচিত নয়। শিশুর জন্য গরুর দুধও সঠিকভাবে প্রস্তুত করা উচিত এবং হজমে অস্বস্তি বা স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলির ঝুঁকি হ্রাস করতে পরিমিত পরিমাণে দেওয়া উচিত। ডায়েট-এ গরুর দুধ অন্তর্ভুক্ত করার আগে বাবা-মায়েদের সর্বদা তাদের সন্তানের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

ইসরাত

×