আপনার বয়স যদি পঞ্চাশোর্ধ হয়, আপনার যদি বারবার প্রস্রাবের বেগ হয়, প্রস্রাবের বেগ পেলে ধরে রাখতে না পারেন, প্রস্রাব করার জন্যে রাতে ঘুম ভেঙে যায় তাহলে আপনি সম্ভবত প্রস্টেট গ্ল্যান্ডের সমস্যায় ভুগছেন।
প্রস্টেট কি
প্রস্টেট পুরুষের জননতন্ত্রের একটি গ্রন্থি, যা শুক্র রসের একটা অংশ তৈরি করে শুক্রকিটের পুষ্টি ও পরিবহনে সাহায্য করে। এটির অবস্থান মূত্রথলির ঠিক নিচে, মূত্রথলি থেকে মূত্রনালী এই গ্রন্থির ভিতর দিয়ে বেরিয়ে আসে।
প্রস্টেটের রোগগুলো কি
এই গ্রন্থির প্রধান রোগগুলির মধ্যে
১) প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি সর্বাপেক্ষা বেশি দেখা যায়
২) এছাড়া প্রস্টেট গ্রন্থির সংক্রমণ ও দেখা যায়
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থির আয়তন বাড়তে থাকে, গবেষণায় দেখা যায় পুরুষদের পঞ্চাশোর্ধ বয়েসে প্রায় ৮%, ষাটোর্ধ বয়েসে ৫০%, আশির বেশি বয়েসে ৮০% পুরুষের এই রোগ দেখা যায়, অর্থ্যাৎ বৃদ্ধকালে প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি দেখা যায়। এই রোগের বংশগত যোগ আছে।
এই বৃদ্ধিটা দুই ধরনের হয়
১) অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিনাইন বৃদ্ধি (ইঊচ বা ইচঐ)
২) কিছু ক্ষেত্রে মেলিগন্যান্ট বা ক্যানসারের কারনে বৃদ্ধি (ঈধচ )
প্রাথমিক লক্ষণ
১) বার বার প্রস্রাব পাওয়া
২) বিশেষত, রাতে বার বার প্রস্রাবের বেগ
৩) প্রস্রাব চাপ আসলে ধরে রাখতে না পারা
৪) প্রস্রাবের গতি কমে যাওয়া চাপ দিয়ে প্রস্রাব করা
৫) প্রস্রাব পেলে ঠিকভাবে ক্লিয়ার করতে না পারা
৬) মূত্রত্যাগের সময়ে ব্যথা জ্বালা অনুভূত হওয়া।
লক্ষণ
লক্ষণগুলোর পরেও যদি সঠিক চিকিৎসা না হয় তবে জটিলতা সৃষ্টি হয়ে এই লক্ষণগুলো দেখা যায়-
১. বার বার ইউরিনে ইনফেকশন
২. প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া
৩. একবারে প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া যাকে আমরা একুইট রেটেনশন বলি
৪. মূত্রথলিতে পাথর, হার্নিয়া
৫.চিকিৎসা না নিয়ে দীর্ঘদিন অবহেলার কারণে মূত্রথলি ও কিডনির ক্ষতি হতে থাকে
এসব জটিল লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
রোগ নির্ণয়
রোগী এ জাতীয় লক্ষণ নিয়ে আসলে চিকিৎসক তার শারীরিক পরীক্ষা করে প্রস্টেট বড় হয়েছে নির্ণয় করে কিছু ল্যাবরেটরি টেস্ট দিয়ে বৃদ্ধিটা কি ধরনের
১) বিনাইন নাকি ম্যালিগন্যান্ট
২) কি ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করবেন
বিনাইন প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রন্থির আয়তন, রোগের উপসর্গ, কতটা শারীরিক সমস্যা করছে, কোনো জটিলতা আছে কিনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফলের উপরে নির্ভর করে তিন ধাপে প্রস্টেট বৃদ্ধির চিকিৎসা করা হয়
১) রোগের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে- লাইফস্টাইল (জীবন যাত্রা) পরিবর্তনের উপদেশ দেওয়া হয়
২) পরবর্তী ধাপ দ্বিতীয় বা মধ্যম পর্যায়েÑ ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়
৩) তৃতীয় বা তীব্র পর্যায়ে - অস্ত্রোপচার
চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির যুগে এখন প্রস্টেট অস্ত্রোপচারে অনেক উন্নতি হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঞটজচ, ঞটগঞ ঞটঠচ ডধঃবৎ ঠধঢ়ড়ৎ ঞযবৎধঢ়ু চৎড়ংঃধঃব ষরভঃ ও খঅঝঊজ জাতীয় চিকিৎসা, তবে এখন পর্যন্ত ঞটজচ কে এঙখউ ঝঃধহফধৎফ চিকিৎসা ধরা হয়। এই পদ্ধতিতে কোনো প্রকার কাটা ছেড়া ছাড়া অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রস্টেট গ্রন্থির বাড়তি অংশ কেটে বের করে আনা হয়, রুগী ৩/৪ দিনে বাড়ি চলে যেতে পারে এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী স্বাভাবিকভাবে সুস্থ জীবন শুরু করতে পারে।
ম্যালিগন্যান্ট প্রস্টেট বৃদ্ধি বা প্রস্টেট ক্যানসারের লক্ষণগুলো বেনাইন রোগের মতই হয় এবং চিকিৎসা ও ধাপে ধাপে করা হয়। প্রথমে গজও ও চৎড়ংঃধঃব ইরড়ঢ়ংু করে ক্যান্সার নিশ্চিত হয়ে তার স্টেজ গ্রেড নির্ধারণ করে সে অনুযায়ী
১) রেডিকেল সার্জারি
২) রেডিওথেরাপি
৩) হরমোন থেরাপি
৪) কেমোথেরাপি
আশার কথা হলো এটা অন্যান্য ক্যান্সারের মতো মারাত্মক নয়, প্রস্টেট ক্যান্সারের বৃদ্ধি বা শরীরে ছড়িয়ে পড়া অন্য ক্যান্সারের তুলনায় অনেক ধীর, ফলে সময় মতো সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থভাবে অনেকদিন বেঁচে থাকা যায়।
চিকিৎসা নিয়ে ৮০
শতাংশ রোগী ১০ বৎসরের বেশী বেচে থাকতে পারেন।
রোগ প্রতিরোধের উপায়
প্রস্টেটের বেনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট বৃদ্ধির কোনো নির্দিষ্ট কারন জানা যায় নাই, এটি একটি প্রাকৃতিক বার্ধক্য প্রক্রিয়া যা সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধ করা যায় না। তবে সঠিক নিয়মে জীবন চালনা করলে কিছু পরিত্রাণ পাওয়া যায় যেমন
১। প্রোটিন শর্করা চর্বি জাতীয় খাদ্য সীমিত করে শাকসবজি ফল বেশি এরকম সুষম খাদ্য
২। পরিমিত তরল
৩। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
৫। কো মর্বিডিটি যেমন ডায়াবেটিস প্রেসার হৃদরোগ নিয়মিত চিকিৎসা করে নিয়ন্ত্রণে রেখে ভালো থাকতে পারবেন।
প্রস্টেটের রোগ হলেও দুশ্চিন্তার কিছু নেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে সফলভাবে প্রস্টেটের সব ধরনের চিকিৎসা সম্ভব। আশাব্যাঞ্জক কথা হলো প্রস্টেট রোগের চিকিৎসার সকল অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সুদক্ষ অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বাংলাদেশে আছে এবং প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বড় হাসপাতালগুলোতে এ সকল চিকিৎসা পাওয়া যায়। আলোক হেলথ কেয়ার হাসপাতালের দক্ষ ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে সাফল্যের সঙ্গে নিয়মিত এই চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ইউরোলজি বিভাগ
আলোক হেলথ কেয়ার লি.মিরপুর, ঢাকা।
হটলাইন: ১০৬৭২, ০৯৬৭৮৮২২৮২২