শুধু বুকের দুধ যখন শিশুর পুষ্টি চাহিদা সম্পূর্ণ রূপে মেটাতে পারে না, তখন শিশুকে যে বাড়তি খাবার দেওয়া হয় তাকে পরিপূরক খাদ্য বলে। ভালো মানের পরিপূরক খাদ্যে অধিক পরিমানে শর্করা, আমিষ, স্নেহ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের সংমিশ্রণ থাকে।
পরিপূরক খাবারের প্রয়োজনীয়তা
জন্ম থেকে ২বছর পর্যন্ত শিশুর বৃদ্ধি, বিকাশ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। যথাযথ বুকের দুধ এবং সময়মতো পরিপূরক খাবার শুরু না করা হলে শিশুর সংক্রমণজনিত অসুখ যা পরবর্তীতে শিশুর অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ৬মাস পর শিশুর যথাযথ বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য পরিপূরক খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিশুর ৬মাস পরেও যদি শুধু বুকের দুধ দেওয়া হয় তখন পর্যাপ্ত শক্তি এবং পুষ্টির ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায়। এই জন্য শিশুর বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত, বিভিন্ন অপুষ্টিজনিত অসুখ এবং শিশুর সংক্রমণজনিত অসুখ- নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া দেখতে পাওয়া যায়।
পরিপূরক খাবার নিয়ে আমাদের শিশুর অবস্থান
সমীক্ষায় দেখা যায় যে আমাদের দেশে সময়মতো পরিপূরক খাদ্য দেওয়া হয় শতকরা ৬৩ জন শিশুকে, বিভিন্ন খাবারের সংমিশ্রণে দেওয়া হয় শতকরা ১৮ জন শিশুকে। ডিম দেওয়া হয় শতকরা মাত্র ২৩ জন শিশুকে, অন্যদিকে অসাস্থ্যকর খাবার যেমন- চিপস, বাদাম, জুস কোমল পানীয় দেওয়া হয় শতকরা ১৫ জন শিশুকে। আর এ সকল শিশুকে কখন কতবার খাবার দিতে হবে, এর পাশাপাশি কেমন করে বুকের দুধ দিতে হবে এই নিয়ে বাবা-মার মনে বিভ্রান্তি দেখা গেছে।
শক্তির তারতম্য
যে পরিমাণ শক্তি শিশুর প্রয়োজন এবং যে পরিমাণ শিশু বুকের দুধ গ্রহণ করে থাকে তাতে ১ম ৬ মাস বয়স পর্যন্ত পর্যাপ্ত থাকে। পরবর্তী ৬-৮ মাস ২০০ কিলো ক্যালোরি, ৯-১১ মাস ৩০০ কিলো ক্যালোরি, ১২-২৩ মাস ৫৫০ কিলোক্যালোরি ঘাটতি দেখতে পাওয়া যায়। তাই ৬ মাস বয়সেই পরিপূরক খাবার শিশুকে পরিবেশন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খাবারের বৈচিত্র্য
বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সংমিশ্রণের ওপর নির্ভর করে শিশুর খাবার বৈচিত্র্য-
মোটা দাগে খাবার তিন ভাগে ভাগ করা যায় যেমন-
১. ক্ষয় পূরণ ও বৃদ্ধি সাধণ খাবার।
২. শক্তি দায়ক খাবার।
৩. রোগ প্রতিরোধকারী খাবার
এছাড়াও খাবার গুলোকে সাত ভাগে ভাগ করা হয়
১. শস্য, ভাত, গম।
২. ডাল/বাদাম
৩. দুধ/দই/পনির/ঘি/মাখন
৪. মাংস/ মাছ
৫. ডিম
৬. ভিটামিন এ যুক্ত ফলমূল, সবজি
৭. অন্যান্য সবুজ সবজি।
এই ৭ ধরনের খাবার থেকে ৪টি খাবারের সংমিশ্রণের ফলে তৈরি খাবারকে উচ্চমানের খাবার সন্নিবেশ বলা হয়ে থাকে। পরিপূরক খাবারের সঙ্গে শিশুকে পর্যাপ্ত নিরাপদ পানি ও অন্যান্য তরল খাবারের সঙ্গে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিপূরক খাবার :
বয়স
বুকের দুধের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় শক্তির পরিমাণ
দৈনিক খাবার
খাবার পরিমাণ
৬-৮ মাস
২০০ কিলোক্যালোরি
দিনে ২ বার প্রধান খাবার, সঙ্গে ১-২ বার হালকা খাবার
প্রথমে ২-৩ টেবিল চামচ খাবার শুরু করে পরবর্তীতে বৃদ্ধি করে ২৫০ মিলি বাটির অর্ধেক পরিমাণ দিতে হবে।
৯-১১ মাস
৩০০ কিলোক্যালোরি
দিনে ৩বার প্রধান খাবার, সঙ্গে ১-২ বার হালকা খাবার
প্রতিদিন ২৫০ মিলি বাটির অর্ধেক পরিমাণ খাওয়াতে হবে
১২-২৩ মাস
৫৫০ কিলোক্যালোরি
দিনে ৩বার প্রধান খাবার, সঙ্গে ১-২ বার হালকা খাবার
প্রতিদিন ২৫০ মিলি বাটির সম্পূর্ণ খাওয়াতে হবে।
বিভিন্ন পরিপূরক খাবারের উদাহরণ
ভাত, মুড়ি, খিচুড়ি, নরম সিদ্ধ ডিম, (সবজি+মুরগির স্যুপ), ফলের রস, আলু সিদ্ধ এ ছাড়াও মাছ, মাংস খিচুড়ির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে, সঙ্গে ফল-কলা, পেপে ইত্যাদি হালকা নাস্তা দিতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়
সঠিকভাবে বাচ্চার বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শক্তি, আমিষ, শর্করা এবং অনুপুষ্টি পাওয়ার জন্য সময়মতো পরিপূরক খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে। এই সময় বাচ্চাদের পুষ্টিকর পারিবারিক খাবারে অভ্যস্থ করতে হবে। শিশুদের উৎসাহিত করতে হবে নিজ হাতে খাওয়ার জন্য।
লেখক : অধ্যাপক ,শিশু বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
চেম্বার : আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, মিরপুর-৬ ঢাকা। ফোন: ১০৬৭২
শিশুর পরিপূরক খাদ্য
শীর্ষ সংবাদ: