.
গলা ব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষ কম। শীতের সময়টাতে ঠান্ডা লেগে কারও কারও গলা ব্যথা বেড়ে যায়। গলা ব্যথা মূলত গলার প্রদাহ এবং যন্ত্রণা। এর ফলে ঢোক গিলতেও কষ্ট হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র শীত।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় গলা ব্যথাকে বলে ফ্যারিঞ্জাইটিস। এটি ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস উভয়ের সংক্রমণের কারণে হতে পারে। ভাইরাল সংক্রমণ সাধারণত স্বরে ঘটে এবং উপসর্গ অনুসারে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু ব্যাকটেরিয়ার কারণে হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। এছাড়া ধূমপান, শুষ্ক বাতাস, তামাক অথবা প্রচণ্ড দূষণের কারণেও এমনটা হতে পারে।
লক্ষণ : বড় ও শিশুদের গলায় খুসখুসে ভাব হয়। এর ফলে যন্ত্রণাদায়ক অনভূতি হয়। যে কোনো কিছু খেতেই কষ্ট হয়। কাঁশি হয়। গলার স্বর কর্কশ লাগে। গলার দুইপাশে গ্রন্থি ফুলে যায়। গলার ভেতরে লালচে ভাব হয়, অস্বস্তিকর ফোলা ভাব দেখা দেয়। নাক দিয়ে পানি পড়ে, জ্বর, বমি, মাথা ব্যথা এবং হাঁচি এসব দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে থাকে, তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
কখন ঝুঁকিতে থাকবেন : যদি শিশু বা বড়দের গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বেশি জ্বর আসে এবং অন্যান্য লক্ষণগুলো দেখা যায়, তবে অবশ্যই ডাক্তার কাছে যেতে হবে। গলা ব্যথা যেকোন বয়সের মানুষের হতে পারে। তবে ৩ থেকে ১৫ বছরের শিশুর গলার সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। সাধারণত, যে ব্যাকটেরিয়ার জন্য তাদের স্ট্রেপ থ্রোট হবে, তা হল স্ট্রেপ্টোকক্কাস পায়োজেনাস। স্ট্রেপ সংক্রমণকে চিহ্নিত করার জন্য পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। শিশুদের এই সমস্যা হলে দ্রুতই চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
কারণ : দূষণ, ধোঁয়া এবং ধুলোর বেশি সংস্পর্শে আসার কারণে গলা ব্যথা হয়। অ্যালার্জির কারণে গলায় ব্যথা হলে তা সারতে বেশি সময় লাগে। নাকের সংক্রমণ হাঁচি বা নিষ্কাশনের সময় গলার দিকে চলে যায় এবং এর ফলে গলায় সংক্রমণ হতে পারে। নাক থেকে ক্ষরিত পদার্থের জন্য গলায় অস্বস্তি হয় এবং গলায় সুড়সুড়ি ও চুলকানির অনুভূতি সৃষ্টি করে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বা ঘনজনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাসের কারণে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণে গলা ব্যথা দেখা দেয়। বদ্ধপরিবেশে বসবাসেও কারও কারও গলায় ব্যথা হতে পারে।
চিকিৎসা : ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ফ্যারিঞ্জাইটিস অথবা গলার সংক্রমণ ঘটে। স্ট্রেপ্টোকক্কাস দ্বারা সংঘটিত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়। যেসব বাচ্চাদের স্ট্রেপ সংক্রমণ হবে, তাদের অবশ্যই অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স শেষ করতে হবে।
ভাইরাল সংক্রমণের কারণে গলা ব্যথা হলে কোনো চিকিৎসা হোক বা না হোক, ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যে তা কমে যায়। যদি গলা ব্যথার পাশাপাশি জ্বর থাকে, তবে প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ ওষুধ সেবন করতে হবে। কখনো কখনো ফ্লু, সাধারণ ঠান্ডা লাগা, হাম, গনোরিয়া, চিকেনপক্স, মনোনিউক্লিওসিস এবং ক্রুপ হলে প্রচণ্ড গলা ব্যথা হতে পারে। এই ধরনের সমস্যা বিশেসজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
ঘরোয়া প্রতিকার : প্রচুর পানি দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে। হাত না ধুয়ে নিজের মুখ স্পর্শ করা যাবে না। খাবার ও ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস আলাদা রাখতে হবে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ভাইরাস ছড়াতে পারে। গলার গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া কমানোর জন্য লবণপানিতে গার্গেল করা খুব সহজ উপায়। এটি গলায় অবাঞ্ছিত ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে।
লেখক : অধ্যাপক বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউট
শ্যামলী। প্রয়োজনে- ০৯৬১০৭৮৭৮০৩