ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস 

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ২২ অক্টোবর ২০২৪

কৈশোরকালীন স্বাস্থ্যসেবার নতুন দিগন্ত

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

জরায়ুমুখ ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী অপ্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে চট্টগ্রামে বিনামূল্যে এইচপিভি টিকা পাবে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কিশোরী। তবে কিশোরী বয়সে এইচপিভি টিকা নিলে নারীদের এ ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। এটি প্রতিরোধে এবার কিশোরীদের এ বছর বিনামূল্যে এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেওয়া শুরু হচ্ছে। ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা বাদে ৭টি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনামূল্যে এ টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) পরিচালিত এ কার্যক্রম চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। চট্টগ্রামে ৩ লাখ ৪০ হাজার জনকে এ টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন। একইসঙ্গে এ টিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে অপপ্রচার চলছে তার ভিত্তি নেই।
মঙ্গলবার বিকালে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এইচপিভি প্রোগ্রাম বিষয়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রতিটি টিকা নিতে একটু ভীতি থাকে, ব্যথা কিংবা কারও জ্বর এসব বিষয়। তবে এইচপিভি টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম। কোভিড ভ্যাকসিনে বিরাট আতঙ্ক ছিল। এবার আতঙ্কিত হবার কিছু নেই।  কারণ এ টিকা প্রথম না। যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারা এ টিকা আগেও নিয়েছে। একসময় এটি প্রাইভেটলি চালু ছিল। ঢাকা বিভাগে পুরোপুরি চালু হয়েছে ২০২৩ সালে। এবার চট্টগ্রাসহ ৭টি বিভাগে ২৪ তারিখ থেকে শুরু হবে। নগরীর সরকারি ডা. খাস্তগীর স্কুল থেকে উদ্বোধন হবে কার্যক্রম।

বেলজিয়াম থেকে এ টিকা আনা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, সম্পূর্ণ নিরাপদ এ টিকা নেওয়ার ফলে কিশোরীদের জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধ করা যাবে। যারা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে তাদের পাশাপাশি স্কুল থেকে বাদ পড়া কিশোরীদেরও রেজিস্ট্রেশন করে একসঙ্গে টিকা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সবগুলো সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সভা হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় জরায়ুমুখ ক্যানসারে। একটি টিকা দিলেই এর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে কিশোরীরা। এটা আগামী বছর থেকে হয়ে যাবে রুটিন টিকার অংশ।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ সর্ম্পকে নেতিবাচক মন্তব্য করা হচ্ছে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি মাদ্রাসার খবর পেয়েছি, তাৎক্ষণিক ওসি এবং ইউএনওকে জানানো হয়েছে। তারা নিশ্চিত করে আমাদের অবগত করেছেন যে, ওই মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থী এ টিকা নেবে।
বন্ধ্যাত্ব হতে পারে বলে যে অপপ্রচার করা হচ্ছে এ সম্পর্কে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন স্পষ্ট করে বলেন, যে অপপ্রচার করা হচ্ছে এ ধরণের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। দেশে যখনই কোন টিকা প্রোগ্রাম নেয়া হয় একটি পক্ষ ভুল তথ্য দিয়ে উত্তেজিত করে। এ ধরণের তথ্যের কোন ভিত্তি নেই। এটা নতুন না। এ টিকা আগে থেকেই দেয়া হচ্ছে। বরং কেউ যদি আগে এক ডোজ এইচপিভি টিকা নেয়, তাহলে দ্বিতীয়বার দিলে বুস্টার হবে। যেমন হেপাটাইটিস বি ও টিটেনাসের টিকা। যাতে এসব রোগের জীবাণু আক্রমণ করতে না পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও বাড়ে।
সেখানে আরও বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ( রোগ ও নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার, মেডিকেল অফিসার ডা. মুহাম্মদ নওশাদ খান, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. এফএম জাহিদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৪ হাজার ৩৮৮টি বিদ্যালয়ের ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৮৯ জনকে এ টিকার আওতায় আনা হবে। এর বাইরে ১০ হাজার ২১৯ জনকেও দেওয়া হবে টিকা। ইতিমধ্যে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১ লাখ কিশোরী।
৫ম থেকে ৯ম শ্রেণি বা তার সমমানে অধ্যায়নরত সকল ছাত্রী এবং ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরী (যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত নয়) তাদের এক ডোজ এইচপিভি টিকা দেওয়া হবে। ১ ডোজ এইচপিভি টিকা কিশোরী অবস্থায় নিলে তা জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। সেজন্যই ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের এ টিকা দেওয়া হবে। এ টিকা পেতে আগ্রহী নির্দিষ্ট বয়সের সকলকে অনলাইনে নিবন্ধন করার আহ্বান জানানো হয়। প্রথম ২ সপ্তাহের ১০ দিন ও পরের দুই সপ্তাহের ৮ দিন, মোট ১৮ দিন এ ক্যাম্পেইন চলবে। চট্টগ্রামে ৯৫ থেকে ৯৬ শতাংশ কিশোরী এই সীমার মধ্যে পড়বে, আর বাকিদের ওয়েট লিফটিং করে দেয়া হবে। আলাদা তালিকা করা হবে। দুই একদিন দেরি হলেও সবাই টিকা পাবে। জন্ম নিবন্ধন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে, ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কিশোরীরা এ টিকার আওতায় আসবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষকদের সঙ্গে উপজেলা পর্যায়ে এডভোকেসি করা হয়েছে। যেহেতু চট্টগ্রামে অনেক বড় বড় মাদ্রাসা আছে। বহু ছাত্রী আছে। তারা ভালো ভাবেই সহযোগিতা করছে।

শিহাব

×