ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১

ডিমেনশিয়া নির্ণয়

পরবর্তী পদক্ষেপ

ডা. এম. এস. জহিরুল হক চৌধুরী

প্রকাশিত: ২১:০১, ২১ অক্টোবর ২০২৪

পরবর্তী পদক্ষেপ

ডিমেনশিয়া

ডিমেনশিয়া বা ভুলে যাওয়া শুধুমাত্র একটি রোগের লক্ষণ নয়, এর সঙ্গে মস্তিষ্কের অন্যান্য কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়ার লক্ষণসমূহ প্রকাশিত হয়। যেমন : ভাষাগত ও আচারণগত সমস্যা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, বুদ্ধিমত্তার লোপ এবং মনবৈকল্য ইত্যাদি লক্ষণ ক্রমাগতভাবে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত ষাটোর্র্ধ ব্যক্তিগণ এই রোগে আক্রান্ত হন। ষাটোর্ধ প্রতি ২০ জনে ০১ জন ব্যক্তি ডিমেনশিয়া রোগে ভোগেন। আশি বয়সের বেশি প্রতি ৫ জনে ১ জন ব্যক্তি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ষাট বছরের কম বয়সী লোকজন ও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

ডিমেনশিয়া রোগের কারণ সমূহ

ডিমেনশিয়ার কারণসমূহ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কিছু কিছু কারণ প্রতিকার যোগ্য (জবাবৎংরনষব) এবং কিছু কারণ অপ্রতিকার যোগ্য (ওৎৎবাবৎংরনষব)।

কি কি কারণে ডিমেনশিয়া হয়

* মস্তিষ্কের নিউরন শুকিয়ে যাওয়া
* অ্যালঝেইমারস ডিজিজ
* পারকিনসন ডিজিজ
* বারংবার স্ট্রোক (মাল্টি ইনফার্স্ট ডিমেনশিয়া)
* ভিটামিনজনিত অভাব (যেমন ভিটামিন বি-১২)
* মস্তিষ্কের সংক্রমণ, যেমন- এইডস, নিউরো-সিফিলিস
* ব্রেন টিউমার
* মাথায় আঘাতজনিত কারণ
* থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
* নরমাল প্রেসার হাইড্রোসেফালাস
* দীর্ঘ মেয়াদি ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
 * জেনেটিক কারণ / বংশগত কারণ
* মাদকাসক্তি (যেমন : অ্যালকোহল, ইয়াবা সেবন)
* বিষণœতা (চংবঁফড় ফবসবহঃরধ)

ডিমেনশিয়া রোগ কি নির্ণয় করা যায়?

* রোগের সঠিক ইতিহাস, পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় সম্ভব।

ডিমেনশিয়া রোগ নির্ণয়ের পদক্ষেপ সমূহ

 ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা, যেমন :

 মিনি মেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষা

* প্রয়োজনীয় বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা
* নিউরো-ইমেজিং
* ব্রেন বায়োপসি

ডিমেনশিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণসমূহ 

* স্মৃতিশক্তি লোপ
* প্রতিদিনের কাজের বিভ্রান্তি
* ভাষাগত সমস্যা
* সময় ও স্থান চিহ্নিত করতে অপারগতা
* বিচার-বিবেচনার মাত্রা কমে যাওয়া, অন্যমনস্ক হওয়া, জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা
* মেজাজ ও স্বাভাবিক আচার-আচরণে পরিবর্তন
* ব্যক্তিত্ববোধের পরিবর্তন
* কর্মোদ্যম হারিয়ে ফেলা
* অনিদ্রা, খাবারে অরুচি

মিলি মেন্টাল স্ট্যাটাস পরীক্ষা (গগঝঊ)
ডিমেনশিয়া রোগ নির্ণয়ের জন্য বেড সাইড টেস্ট হিসেবে এটি অত্যন্ত কার্যকর পরীক্ষা। এই স্কেলের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ৫টি মৌলিক কার্যক্ষমতা নিরীক্ষা করা হয়।

চিকিৎসা

ডিমেনশিয়া রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করে দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। তবে কখনো কোনো রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে রোগীর ডিমেনশিয়ার মূল কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা প্রদান করা। যদি রোগীর ইরিভারসিভল ডিমেনশিয়া হয়ে থাকে অর্থাৎ যেটা চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ আরোগ্য সম্ভব হয় না তখন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রোগীর নিকটাত্মীয় বা সেবা প্রদানকারীকে বিশদভাবে রোগীর রোগের বর্ণনা দিতে হবে এবং ভবিষ্যতে এই রোগের প্রকৃতি, সেবার ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধৈর্য সহকারে আলোকপাত করতে হবে।

বিশ্বে ডিমেনশিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব
* আমাদের জীবনযাত্রার পদ্ধতি এবং মানুষের গড় আয়ুষ্কাল বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
* বর্তমানে বিশ্বে এ জাতীয় রোগীর সংখ্যা হচ্ছে ৫ কোটি, ২০৩০ সালে এই সংখ্যা হবে ৭ কোটি ৬০ লাখ এবং ২০৫০ সালে এর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১৩ কোটি ৫০ লাখ।

বাংলাদেশে ডিমেনশিয়ার প্রাদুর্ভাব
* ২০১৫ সালে বাংলাদেশে অনুমিত ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার এবং ২০৩০ সালে তা বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৮ লাখ ৩৪ হাজার এবং ২০৫০ সালে সেটা হবে ২১ লাখ ৯৬ হাজার।

বিশ্বে ডিমেনশিয়া নির্ণয় ও  চিকিৎসা 

বিশ্বে প্রতি ৩ সেকেন্ডে কেউ ডিমেনশিয়া আক্রান্ত হচ্ছে।
* বিশ্বে বর্তমানে ৫ কোটি মানুষ ডিমেনশিয়া আক্রান্ত।
* ৬২% মানুষ নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বাস করছে।
* নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ১০% মানুষের ডিমেনশিয়া নির্ণীত হয়।
* যথাযথ চিকিৎসা ও দীর্ঘ মেয়াদি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রাখা উচিত। 

লেখক : অধ্যাপক ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল
চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি. (শ্যামলী শাখা, ইউনিট-২) 
মোবাইল : ০১৯২৭০৭৮৭৬৬, ০১৮৬৫৪৪৪৩৮৬,

×