ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

আহতদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার প্রক্রিয়া চলমান

প্রকাশিত: ২১:১৭, ৭ অক্টোবর ২০২৪

আহতদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার প্রক্রিয়া চলমান

সংবাদ সম্মেলন

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেছেন, যারা আহত হয়েছেন বিশেষত যারা চোখে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন, দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তারদের মেডিকেল টিম এনে (চীন, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশ হতে) চিকিৎসার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের এডভান্স মেডিকেল টীম বাংলাদেশে এসেছেন। 

তারা হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে চিকিৎসায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এছাড়া, Need Based Assessment-পূর্বক পরবর্তীতে কি ধরণের সেবা/সাপোর্ট দেয়া হবে সে বিষয়েও তারা অবহিত করবেন।  এছাড়া, বিভিন্ন দেশ এবং বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। 

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আহত চক্ষু রোগীদের সুচিকিৎসার জন্য সেবা ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উদ্যোগে নেপাল হতে ০৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ও ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, আগারগাও, ঢাকায় এসেছেন। এছাড়া, আজ ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ফ্রান্স এর একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও আসছেন। 

যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ১৫ দিনের ভেতর যুক্তরাজ্য হতে অর্থোপেডিক ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য বাংলাদেশে আসবেন।নেপাল হতে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎকগণ জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মোট ১৯২ (একশত বিরানব্বই) জন চক্ষু রোগীকে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন এবং ০৪ (চার) জন জটিল রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করেন। ইনজুরড রেটিনা রোগীদের রেটিনার অস্ত্রোপচার শেষ হলে প্রায় ছয়মাস পর কর্ণিয়া অপারেশনের প্রয়োজন পড়তে পারে। 

কর্ণিয়া সরবরাহে সেবা ফাউন্ডেশন সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এছাড়া বিদেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বলেছেন, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকগণ রোগীদেরকে যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তা ছিল সঠিক।এই ধরনের রোগীদেরকে নেপালেও একইভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। চোখের ভিতরের Pillet/ গুলি যে পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ সঠিক।

ছাত্র জনতার অভ্যূত্থানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও শহীদ পরিবারকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে নীতিমালা প্রনয়ণ এবং শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিচিতিসহ একটি পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা এবং আহত-নিহতদের একটা প্রাথমিক তালিকা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছেন জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন,  প্রস্তুতকৃত তালিকা সর্বসাধারণের যাচাইয়ের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। 

সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে ডাটাবেইজ তৈরির সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সারাদেশে (০৬ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত) মোট শহীদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত  ৭৩৭ জন এবং আহতের সংখ্যা ২২,৯০৭ জন।

ডেঙ্গু বিষয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের সকল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসমূহে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপন, প্রয়োজনীয় ঔষধ এবং অন্যান্য সামগ্রির সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, ল্যাবরেটরিতে ডেঙ্গু রোগ নির্ণয় ও অন্যান্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া DNCC ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতাল  হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হবার আহবান জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ডেঙ্গুর দুটি দিক আছে। একটি হচ্ছে প্রতিরোধ, আরেকটি  চিকিৎসা। আমরা যদি প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে সচেতন করতে পারি তাহলে ডেঙ্গুর প্রতিকার করা সম্ভব।

এছাড়া দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে (জেলা পর্যায় পর্যন্ত) ডেঙ্গু বিষয়ে ‘ফোকাল পারসন’ নির্ধারণ করা হয়েছে, যাদের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সারা দেশের ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় ডেঙ্গু টেস্ট কিট, আইভি ফ্লুইড (স্যালাইন) এবং অন্যান্য লজিস্টিক এর স্টক এবং চাহিদা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সারা দেশে সকল সরকারি হাসপাতালের Statistician ও Lab. Technician গণকে ডেঙ্গু অ্যাপ- বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখা কর্তৃক Dengue Tracker Application- তৈরি হয়েছে। যার মাধ্যমে ল্যাবে পরীক্ষাকৃত ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষার ফলাফল সাথে সাথেই (Real Time) পাওয়া যাবে। 

সংবাদ সম্মেলন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা: মো: সারোয়ার বারী, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ. টি. এম. সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

এম হাসান/ এসআর

×