ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

মেছতা কিভাবে দূর করা যায়

ডা. জাহেদ পারভেজ

প্রকাশিত: ২১:৫২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মেছতা কিভাবে দূর করা যায়

.

মেছতা বা মেলাসমা এক ধরনের চর্মরোগ। মেছতা হলে মুখ, থুতনি, কপালে গালে হালকা বাদামি, কালো বা লালচে ছোপ দেখা যায়। নারীদের রোগটি বেশি হয়। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা মেছতায় বেশি আক্রান্ত হন। মুখ ছাড়াও কারও কারও চিবুক বাহুর উপরিভাগেও মেছতার কালো ছোপ পড়তে পারে।

মূলত ত্বকের রঞ্জক পদার্থ মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই এর কারণ। দিন যত যায়, তত গাঢ় হয় এই রং, তার সঙ্গে বাড়ে রোগীর দুশ্চিন্তা মানসিক চাপ।

চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা মেছতায় বেশি আক্রান্ত হন।

কেন হয় : গর্ভধারণের সময় হরমোনের প্রভাবে অনেক সময় মুখে মেছতা দেখা দিতে পারে। জন্য রোগটিকে অনেকে বলেন, ‘মাস্ক অব প্রেগনেন্সি ছাড়া বংশগতির প্রভাব, অতিরিক্ত সূর্যালোক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হরমোনের সমস্যা, যেমন- থাইরয়েড বা ডিম্বাশয়ের সমস্যায় এটা হতে পারে। মেনোপজের পর এটি বেশি হতে দেখা যায়, তার পেছনেও হরমোনের কারণই দায়ী। আবার অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে মেছতা হতে পারে, ডাক্তারি ভাষায় একে বলেমেলাজমা কসমেটিকা যকৃতের জটিলতার কারণে যে মেছতা হয়, তাকে বলা হয়মেলাজমা হেপাটিকা

যেভাবে বুঝবেনম : ত্বকের কালো রঙের জন্য দায়ী যে রঞ্জক, সেই মেলানিনের পরিমাণ এতে বেড়ে যায়। ফলে, রঙের পরিবর্তনই কেবল চোখে পড়ে, চুলকানি বা ব্যথা কিছু হয় না। তিলজাতীয় লিভাস নোটা, লিভাস আইটো দেখতে প্রায় একই রকম হলেও, আসলে কিন্তু মেছতা নয়। এগুলো সাধারণত এক পাশে হয়ে থাকে কিন্তু মেছতা দুই পাশেই হয়। চিকিৎসক কেবল দেখেই মেছতা শনাক্ত করতে পারেন। তবে সাহায্য নেওয়া যায় উডস ল্যাম্পের (ত্বকের পরীক্ষা)

চিকিৎসা : বর্তমানে কেমিক্যাল পিলিং, মাইক্রোডার্মাব্রেশন পিআরপি থেরাপির মাধ্যমে মেছতার চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিছু আধুনিক মলম মুখে খাওয়া ট্যাবলেটও মেছতা চিকিৎসায় কার্যকর।

মেছতা সাধারণত দুই ধরনের। এপিডারমাল মেলাজমা ডারমাল মেলাজমা। ত্বকের ওপরের অংশে যে মেছতা হয়, তাকে বলে এপিডারমাল মেলাজমা। আর ডারমাল মেলাজমা হয় ত্বকের ভেতরের অংশে। এপিডারমাল মেলাজমার চিকিৎসা সহজ, তবে ডারমাল মেলাজমার চিকিৎসা একটু জটিল।

মেছতা থেকে মুক্তি : গর্ভধারণকালে ত্বকে যে মেছতা দেখা দেয়, তা সন্তান জন্মের পর ধীরে ধীরে এমনিতেই কমে যায়। এই মেছতা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কিছু নেই, ধৈর্য ধরতে হবে।

রোদে বা বাইরে বের হলে উচ্চ এসপিএফযুক্ত সানব্লক ব্যবহার করুন।

প্রচন্ড রোদে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন। অতিবেগুনি রশ্মি এই সমস্যা বাড়াবে।

হরমোনের সমস্যা আছে কি না, শনাক্ত করে চিকিৎসা নিন। হাইড্রোকুইনোন সমৃদ্ধ ব্লিচিং ভিটামিন যুক্ত ক্রিম অনেক সময় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। ছাড়া মেথিমাজোল, এজেলিক অ্যাসিড, স্টেরয়েড ক্রিম ইত্যাদিও ব্যবহৃত হয়। কিন্তু মনে রাখবেন, এগুলো প্রসাধন ক্রিম নয়, ওষুধ। তাই ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

এক সময় মেছতার চিকিৎসায় স্কিন লাইটেনিং ক্রিম লোশন, সেরাম ব্যবহার করা হতো। এদের মধ্যে দুই ভাগ বা চার ভাগ হাইড্রোকুইননই বেশি জনপ্রিয়। হাইড্রোকুইননের সঙ্গে ট্রেটিনয়িক অ্যাসিড (শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ), হাইড্রোকর্টিসন যোগ করা হলে চমৎকার ফল পাওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় ট্রেটিনয়িক অ্যাসিড ব্যবহার নিষিদ্ধ। এক সময় এজোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হতো।

সময়ের সঙ্গে যুগের চাহিদা অনুযায়ী মেছতার অনেক আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ইদানীং মাইক্রোডার্মাব্রাসন ডায়ামন্ড পিল বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কখনো কখনো মাইক্রোডার্মাব্রাসনের সঙ্গে বা শুধু কেমিকেল পিলের পরামর্শ দেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বেশি ব্যবহৃত হয়। এসব পদ্ধতিতে কয়েক সেশন লাগে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, ত্বক চর্ম হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

চেম্বার : চেয়ারম্যান চীফ কনসালটেন্ট চর্ম, যৌন হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন, ডা. জাহেদ হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সেন্টার।

ফোন : ০১৭১৫-০৫০-৯৪৯, ০১৭৩০ ৭১৬-০৬০

×