ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১

ঢাকা মেডিকেলে আলাদা হলো জোড়া লাগানো যমজ রিফা ও শিফা

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ঢাকা মেডিকেলে আলাদা হলো জোড়া লাগানো যমজ রিফা ও শিফা

টানা ১০ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে আলাদা জীবনে রিফা-শিফা

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন চিকিৎসক ১০ ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেছে পেটে ও বুকে জোড়া লাগানো যমজ দুই বোন রিফা ও শিফাকে। 

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে শিশু দুটিকে সফলভাবে আলাদা করার কথা জানায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর  ইসলাম জানান, চলতি মাসের ১৪ জুন বরগুনার বেতাগী থেকে আসা মাহমুদা বুক পেট জোড়া লাগানো শিশু দুটিকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২১ জুন হাসপাতালে ৫ নম্বর ইউনিটে ভর্তি হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একমাস পর আসতে বলা হয়। একমাস পর ভর্তি করা হয় এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষ করে পুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধান দিয়ে একমাস পর পুনরায় দেখা করতে বলা হয়। এবং ছয় মাস পর অপারেশনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ভর্তির পর তাদের কয়েক দফা অস্ত্রোপচার হয়।

ডা. সাহনুর আরও বলেন, গত ৭ সেপ্টেম্বর দশ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করা হয়। পরে দুজনকে আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস (ভেন্টিলেটর যন্ত্র দিয়ে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ও ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর মুক্ত করা হয়। এরমধ্যে রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও শিফা অসুস্থ ছিল। তার হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে শিফার পিত্তনালীর সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে আছে।

শিফা ও রিফার চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমাজ সেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেমের ট্রান্সফিউশান মেডিসিন বিভাগ, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা মা।

ডা. সাহনুর বলেন, অর্থায়ন, জন্মগত ত্রুটিগুলো শনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি। কখনও কখনও এমন অবস্থা পড়তে হয় দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না। কখনও একজনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়, শিফার সমস্যাগুলো ছিল জন্মগত হৃদরোগ। হৃৎপিণ্ডের পর্দা শেয়ারিং, যকৃত শেয়ারিং সাধারণ যকৃত নালী, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম, ম্যালরোটেশান আর রিফার ছিল হৃৎপিন্ডের পর্দা, যকৃত, কমন যকৃত, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম শেয়ারিং। এমন অবস্থায় অস্ত্রোপচার পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তিনি ঢাকা মেডিকেলের  চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান। শিশুদের বাবা বাদশা মিয়া বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকসহ সবার সহযোগিতা পেয়েছি। সবার কাছ থেকে আর্থিকভাবে হেল্প পেয়েছি। সবার কাছে কৃতজ্ঞ।
 
উল্লেখ্য, বাদশা মাহমুদার বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায়। গত বছরের ৭ জুন সিজারিয়ানের মাধ্যমে জোড়া বাচ্চার জন্ম দেন মাহমুদা। এর আগে তাদের ঘরে ছয় বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

 
 

 

শহিদ

×