.
সায়াটিকা সমস্যাকে বাতের ব্যথা ভাবলে ভুল করবেন। এটা আসলে এক ধরনের স্নায়ুজনিত সমস্যা। আমাদের পিঠের মাঝখানে কশেরুকা দিয়ে তৈরি যে লম্বা মেরুদন্ড বা স্পাইন রয়েছে, তার মধ্যে লম্বা দড়ির মতো স্পাইনাল কর্ড সুরক্ষিত থাকে।
এর দুই পাশ থেকে একটি করে নার্ভ বের হয়। নার্ভগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের অনুভূতি ও কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। নার্ভগুলো কশেরুকা থেকে বের হয় খুব সরু ছিদ্র দিয়ে। কোনো কারণে ছিদ্রগুলো সংকুচিত হলে নার্ভে চাপ পড়ে। ফলে প্রদাহ, ব্যথা এবং অসাড়তা দেখা দেয়। এই সমস্যা সাধারণত হার্নিয়েটেড ডিস্ক, মেরুদন্ডের হাড়ের স্পার বা মেরুদন্ডের সংকীর্ণতা (স্পাইনাল স্টেনোসিস) এর কারণে হয়। সায়াটিকা নার্ভ উরুর পিছনে এবং হাঁটুর পিছনে উল্লম্বভাবে নিচের দিকে চলে। এটি হ্যামস্ট্রিং পেশী এবং পায়ের মধ্যে বিস্তৃত থাকে।
কারণ : সায়াটিক নার্ভের সংকোচনের কারণে সায়াটিকা হতে পারে। এই সংকোচন ঘটে যখন আপনার মেরুদন্ডে ডিস্ক হার্নিয়েশন হয়ে থাকে এবং মেরুদন্ডে হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে। সায়াটিকা স্নায়ু টিউমার দ্বারা সংকুচিত হতে পারে বা ডায়াবেটিস দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ঝুঁকির কারণ : ব্যক্তির বয়স, ওজন, পেশা, জীবনযাত্রার অভ্যাস যেমন- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এবং ডায়াবেটিসের অবস্থা সায়াটিকার ঝুঁকি তৈরি করে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিস্ক হার্নিয়েশন এবং হাড়ের স্পারের সমস্যা হতে পারে। কারো কারও ক্ষেত্রে শরীরের অতিরিক্ত ওজন মেরুদন্ডের পরিবর্তন নিয়ে আসে। যারা ভারী ভার বহন করেন বা ড্রাইভিংয়ে বেশি সময় ব্যয় করেন তারাও মেরুদন্ডের পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিউরোপ্যাথি (স্নায়ু ক্ষতি) বাড়ে যা মেরুদন্ডের অবস্থাকেও প্রভাবিত করতে পারে। সায়াটিকার জটিলতাগুলো স্থায়ী স্নায়ুর ক্ষতি, আক্রান্ত পায়ে অনুভূতি হ্রাস এবং অন্ত্র বা মূত্রাশয়ের কার্যকারিতা হ্রাস হিসেবে স্পষ্ট।
চিকিৎসা : সায়াটিকা সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অতিগুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা ডিস্ক প্রলাপ্স এর সমস্যার সমাধান করা যায়। পেশির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ফিজিওথেরাপি অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ চিকিৎসা গ্রহণ করলে অতি দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, যেমন- সামনের দিকে ঝুঁকে কোনো ভারী কাজ করা যাবে না। ভারী ওজন তোলা নিষেধ। কিছুটা শক্ত বিছানায় ঘুমানোর অভ্যাস করতে হবে। ভ্রমণ বা হাঁটাচলার সময় লাম্বার করসেট বেল্ট ব্যবহার করা। পাশাপাশি চিকিৎসকের নির্দেশমতো ব্যায়াম করতে হবে।
লেখক: ডা.এম ইয়াছিন আলী
চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, (দ্বিতীয় তলা) ৪/ এ ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইল : ০১৭৮৭-১০৬৭০২