ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

এ সময়ের জ্বর

লে. কর্নেল ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১ জুলাই ২০২৪

এ সময়ের জ্বর

এ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গু

এই বর্ষা মৌসুমে জ্বরের প্রকোপ অত্যন্ত বেড়ে গেছে। এ সময় জ্বর হলে ডেঙ্গু, করোনা এবং সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের কথা সর্বাগ্রে মাথায় রাখতে হবে। এছাড়া শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ, ইউরিন ইনফেকশন, টাইফয়েড ইত্যাদি কারণেও এ সময় জ্বর হতে পারে। অত্যধিক গরমের কারণে তাপপ্রবাহ থেকেও জ্বর হতে পারে। জ্বরের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক আরও কিছু লক্ষণাদি দেখে অনেক সময় জ্বরের কারণ নির্ণয় করা সম্ভব।

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসজনিত জ্বরের লক্ষণ প্রায় একই ধরনের। এ কারণে ডেঙ্গু, করোনা এবং সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বরের মাঝে প্রথম দু-একদিন পার্থক্য করা মুশকিল। জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, গা হাত-পা-মাথা ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে শুরুতে লক্ষণাদির চিকিৎসা করতে হবে। আনুষঙ্গিক লক্ষণ অনুযায়ী প্রথমেই ডেঙ্গু এবং করোনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া দরকার।
জ্বর হলে করণীয়-
তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন। তাপমাত্রা ১০১ক্ক ফারেনহাইট এর বেশি হয়, তবে জ্বর কমানোর ব্যবস্থা নিন। শিশুদের তাপমাত্রা বেশি হলে অনেক সময় খিঁচুনি পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। বয়স্কদের তাপমাত্রা অনেক বেশি হলে মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। তাপমাত্রা কমানোর জন্য জলপট্টি বিশেষ কার্যকরী। সেজন্য কপালে জলপট্টি দিন। গামছা অথবা তোয়ালে পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে দিন। রোগীকে ফ্যানের নিচে রাখুন কিংবা পাখা দিয়ে বাতাস করুন। রোগীকে অপেক্ষাকৃত ঠা-া কক্ষে রাখুন। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিন।
জ্বরের সময় শরীর থেকে পানি বের হয়ে যায়। এজন্য পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করুন। সাধারণ পানি, শরবত, ফলের রস, ডাবের পানি, স্যালাইন পানি গ্রহণ করুন। চা, কফি, এ্যালকোহল এগুলো পরিহার করুন। কারণ এগুলো মৃদু মাত্রার পানি শূন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। এ সময় বেশি ঠা-া পানিতে গোসল করা যাবে না। এতে রক্তনালীগুলো সঙ্কুচিত হয় ফলে শরীরে তাপ আটকে থাকে। জ্বরের সময় ঘরে বিশ্রাম নিন। কেননা, শারীরিক পরিশ্রম তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।
রোগীকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দায়ক খাবার সরবরাহ করা জরুরী। এ সময় মুখে রুচি উবে যায়। মৌসুমী ফল, সহজ পাচ্য খাবার, নরম খিচুড়ি, সুপ ইত্যাদি খেতে দিন। আম, আনারস, পেয়ারা, কমলার মাঝে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সিসহ অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে যা প্রদাহ দমনে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের একটা বিরাট ভূমিকা রয়েছে। খাদ্য তালিকায় আমিষ বা প্রোটিন যোগ করুন। মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত প্রাণিজ আমিষ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধের পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করবে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন-
তিন দিন বাসায় চিকিৎসা করার পরেও জ্বর না কমলে কিংবা জ্বরের মাত্রা যদি অত্যধিক হয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জ্বরের সঙ্গে প্রচ- মাথাব্যথা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, বারবার বমি, চামড়ায় ছোপ ছোপ দাগ, হৃদস্পন্দন অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়া, শ্বাসকষ্ট, এলোমেলো আচরণ, অসংলগ্ন কথাবার্তা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 
প্রতিরোধ-
অধিকাংশ জ্বরের কারণ হচ্ছে ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এ সমস্ত জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত হাত ধৌতকরণের অভ্যাস রপ্ত করা খুবই জরুরী। বেশিরভাগ ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া আমাদের নাক এবং মুখের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। এগুলো প্রতিরোধের জন্য সর্বোত্তম টিকা হচ্ছে হাত ধৌতকরণের এই অভ্যাসটি। সবার জন্য পৃথক বাসন-কোসন, গ্লাসের ব্যবস্থা রাখা। হাঁচি-কাশির সময় অবশ্যই নাকে মুখে রুমাল ব্যবহার করা। বাইরে বেরোলে মাস্ক পরিধান করা। অত্যধিক গরমে রোদের মাঝে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকা। গরমের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় গ্রহণ করা।

হোটেল-রেস্তোরাঁ, উন্মুক্ত জায়গা থেকে খাবার গ্রহণ না করা। মশা যাতে কামড়াতে না পারে সেজন্য মশারির ব্যবস্থা করা। জ্বর হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ক্ষেত্র বিশেষে আলাদা রাখা। সর্বোপরি রোগ প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টিদায়ক খাবার গ্রহণ করা। এগুলো সবই ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর মোক্ষম প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা।

লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট,
সিএমএইচ।
চেম্বার : আল রাজী হাসপাতাল (২য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা।
মোবাইল : ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫ ও ০১৭২৬০৫০৯১২

×