ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

হৃৎপিণ্ডের এনজিনা

মেজর জেনারেল ডা. সৈয়দ আসিফ ইকবাল (অব:)

প্রকাশিত: ২০:৪৮, ১ জুলাই ২০২৪

হৃৎপিণ্ডের এনজিনা

হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে

বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই বৃদ্ধির অগণিত জানা-অজানা কারণ রয়েছে। তারপরও আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান ও জীবনযাত্রার অভ্যাসগত কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি।
সাধারণত হৃদরোগের অসুখ বলতে আমরা হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনীর সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয় তাকে বুঝি। এই রোগ সংক্রান্ত অঈঈ/অঐঅ/ অঅঞঝ/ ঝঈঅও/ঝঞঝ/ ঋউঅ-এর নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করলে আমরা রোগের মূলত তিন প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি পেয়ে থাকি। 
প্রথমত, নিয়মিত ওষুধ খাওয়া, যা সকল রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা সর্বস্তরের চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য।
দ্বিতীয়ত, ওহাধংরাব ঞৎবধঃসবহঃ, যেমন হৃৎপি-ের বন্ধপ্রায় ধমনীর মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং (ঝঃবহঃ/চঈও) বসানো অথবা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি (ঈঅইএ) করা। যা মূলত বিলম্ব-বিহীন, দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
তৃতীয়ত, কোনো প্রকার ওহাবংরাব পদ্ধতি ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনীর উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কিনা ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিণ্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টঝ-ঋউঅ নির্দেশিত ঊঊঈচ পদ্ধতি, যা কিনা বিজ্ঞানসম্মত, অত্যন্ত কার্যকরী, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন, ব্যয় সহনীয়, সহজ ও একটি নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা। ইতোমধ্যেই ঊঊঈচ ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হৃৎপি-ের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথায় সফলতার সঙ্গে বহুলাংশে ব্যবহার হয়ে আসছে। 
ঊঊঈচ এর কার্যপদ্ধতি (Working Principal) :
আমাদের হৃৎপি- Systole-এর সময়ে পরিশোধিত রক্তকে নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনীর মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং Diastole এর সময় এই রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে।  এই Diastole এর সময় শরীরের নিচের অংশের সকল ধমনীর উপর শরীরের বাহিরে অবস্থিত ঈঁভভ এর মাধ্যমে হৃৎপি-ের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্তকে অপেক্ষাকৃত উচ্চ চাপে দ্রুত হৃৎপি-ে ফেরত পাঠায়। এই কাজটি রোগীর ক্রমাগত ঊঈএ, কম্পিউটার ও কম্প্রেসারের সমন্বিত-কার্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।

দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এই রক্তের তরঙ্গ হৃৎপিণ্ডের করোনারি ধমনীতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে ও যেখানে বাধা প্রাপ্ত হয় সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যাক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে বাধাকে অতিক্রম করে অক্সিজেন সংবলিত রক্ত হৃৎপিণ্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। যার ফলে রোগীর হৃদরোগজনিত বুক ব্যথার উল্লেখযোগ্য উপশম হয়, দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থায় ফেরত আসে। 
 চিকিৎসার সফলতা : সফল চিকিৎসার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে বিশেষ করে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এই চিকিৎসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ও Stable Coronary Artery Disease রোগীদের জীবন যাত্রার মানও সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি দিন দিন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই দেরি না করে stable angina বা বুক ব্যথার রোগীদের এই ব্যাপারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো। 

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ।
আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ১০

×