ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

চিকিৎসায় খরচ হচ্ছে কত শতাংশ অর্থ?

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ২৫ মার্চ ২০২৪

চিকিৎসায় খরচ হচ্ছে কত শতাংশ অর্থ?

চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আয়ের বড় অংশ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে সবার জন্য স্বাস্থ্য এবং স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা কার্যকর বাস্তবায়ন এবং কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে তা মনিটরিংয়ের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আয়ের বড় অংশ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ অর্থ চলে যায় নিজের পকেট থেকেই। যা শুধু আফগানিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এদিকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় স্বাস্থ্য খাতের সরকারি বরাদ্দ অন্য দেশের তুলনায় কম, মাত্র ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

 রবিবার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরে এমন তাগিদ দেওয়া হয়। তবে অনুষ্ঠানের সমাপনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যায়নি, ভালো আছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপী সেমিনারে ৯টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।

‘আনপেকিং দ্য ইকোনমিক ম্যানুফেস্টো অব দ্য আওয়ামী লীগ ট্রেন্ড অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস ফর টুমরোস বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারের সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী এবং অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম। সেমিনার সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

সেমিনারে ‘ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ : প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন ইমপ্রুভমেন্ট’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার। তিনি বলেন, ভারতে চিকিৎসা ব্যয় মানুষের পকেট থেকে যায় ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, মালদ্বীপে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে আফগানিস্তানে এ ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যয়ে সবচেয়ে বেশি যায় ওষুধ কিনতে ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ। মানুষের পকেট থেকে চিকিৎসা ব্যয় কমাতে সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয়। অপর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন এখনো অনেক দূরে। সব ধরনের শিক্ষার হার বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেননা এ দেশে যে শিক্ষা দেওয়া হয় সেগুলো বাস্তবতা বা কর্মের সঙ্গে সংযোগ নেই।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আমাদের একটি পক্ষ মনে করছে বাংলাদেশ শ্রীলংকা হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা তো হয়নি। একটি নতুন ব্যাংক, অনেক বন্ধু দেশ ও সংস্থা আমাদের সহায়তা করছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশ থেকে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে এবং প্রতিশ্রুতিও রয়েছে। আমাদের অবস্থা ভালো আছে। তিনি আরও বলেন, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সবকিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই।

পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম বলেন, নির্বাচনি ইশতেহার আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে একটু সময় তো লাগবে। ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, এখন পর্যন্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে তেল কোম্পানিগুলো। এ বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না হলে বাংলাদেশ অনেক ভালো থাকত। ড. মসিউর রহমান বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এজন্য খেলাপি ঋণ কমানোর প্রচেষ্টাসহ আর্থিক খাতের সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব দিয়েছে।

ড. কামাল আব্দুস নাসের চৌধুরী বলেন, শিক্ষা একটি গতিশীল বিষয়। শিক্ষা সময়ের সঙ্গে মিল রেখে পরিবর্তনশীল। এটা নিয়ে হতাশার কিছু নেই। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার কোনো স্বপ্ন নয়। এটি কমিটমেন্ট। এটি বাস্তবায়নে সরকার তৎপর। তবে কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা মনিটরিংয়ের জন্য একটি কমিটি থাকা দরকার।

তাসমিম 

×