ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ফেব্রুয়ারিতে বাড়তে পারে করোনা 

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ২৭ জানুয়ারি ২০২৪

ফেব্রুয়ারিতে বাড়তে পারে করোনা 

করোনার নতুন উপধরন জেএন.১

শীতে ফ্লু ভাইরাস, রাইনোভাইরাস এবং শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের মতো অন্যান্য মৌসুমি ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায়। এর মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১। গত ডিসেম্বরে (২০২৩) করোনায় সংক্রমণের হার বেড়েছে চার গুণের বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার মূল চিত্র এর থেকেও বেশি। শীত কমলে চলতি বছরের (২০২৪) ফেব্রুয়ারি মাসে করোনা সংক্রমণ কয়েক গুণ বাড়তে পারে। তবে, করোনার নতুন ধরন নিয়ে আতঙ্ক হওয়া কিছু না থাকলেও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। শনাক্ত রোগীদের ৩২ জনই ঢাকা মহানগরে এবং একজন করে কক্সবাজার ও চাঁদপুরে। তবে, এসময়ে আক্রান্তদের মধ্যে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকেই নতুন এ ধরনের সংক্রমণ দ্বারা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এটিকে কড়া নজরে রেখেছে এবং করোনার এ উপধরনকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ বা ‘আগ্রহের বৈকল্পিক’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করেছে। নতুন ধরন জেএন.১-এর লক্ষণ আগের ধরনগুলোর মতোই (যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, স্বাদ বা গন্ধ হারানো ও ক্লান্তি ইত্যাদি)। এছাড়া গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বুকব্যথা, ডায়রিয়া ও বিভ্রান্ত বোধ করা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, করোনার মূল চিত্র অনেক বেশি। সাধারণ মানুষ ঠান্ডা জ্বর মনে করে নিয়মিত পরীক্ষা করছেন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত (২৬ জানুয়ারি ২০২৪) দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৫ জন। মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৪৮১ জনে। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯১ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ৬৪ শতাংশ, ৩৬ শতাংশ নারী। আর মোট আক্রান্তের ৫১ শতাংশ ও মৃতের ৩০ শতাংশ ঢাকা মহানগরের। ঢাকার পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ শতাংশ ও খুলনা বিভাগে ১২ শতাংশ।

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। এ বছর শনাক্ত হয় ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মারা যায় ৭ হাজার ৫৫৯ জন। এর পরের বছর ২০২১ সালে শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭২ হাজার ২৯ জন। মারা যায় ২০ হাজার ৫১৩ জন। এ বছরের ২৮ জুলাই সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্ত হয়। ২০২২ সালে শনাক্ত হয় ৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। মারা যায় এক হাজার ৩৬৮ জন। আর গত ২০২৩ সালে শনাক্ত হয় ৯ হাজার ১৮৯ জন। মারা গেছে ৩৭ জন।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, শীতকালে বাংলাদেশে করোনা রোগী কিছুটা কম থাকে। তবে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি শীত কমলে সংক্রমণ বাড়তে পারে। বর্তমানে করোনার নতুন উপধরন জেএন.১-এর কারণে সংক্রমণ হারও বেড়েছে।

নতুন এ উপধরন সম্পর্কে তিনি বলেন, নতুন উপধরন মারাত্মক না হলেও সংক্রমণ হার অনেক বেশি। আমদের মনে রাখতে হবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য করোনা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। তাই ষাটোর্ধ্ব ও কোমরবিডি (দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা) রোগাক্রান্তদের জন্য হুমকি হতে পারে। তাই এ সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা।

নতুন এ ধরনের বিরুদ্ধেও করোনা টিকা কার্যকর জানিয়ে মুশতাক হোসেন বলেন, যারা মেডিকেল বা হাসপাতালে কাজ করেন। যাদের বয়স ৬০ এর বেশি, কোমরবিডিটি আছে তাদের মাক্স পরা জরুরি। এছাড়া যারা এখনো চতুর্থ ডোজের টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়া উচিত।

অন্যদিকে, বিশ্বজুড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের গত ২৫ জানুয়ারির তথ্যমতে, ২৩১ দেশে একদিনে ১৩ হাজার ৩৮০ জনের করোনা শনাক্ত এবং মৃত্যু ১০৯ জনের। এসময়ে সবচেয়ে বেশি নয় হাজার ২৫২ শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, আর মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় শনাক্ত ১ হাজার ৮৩৫ জন, জার্মানিতে ৮৬১ জন, পোল্যান্ডে ৫৯৪ জন। আর ভারতে শনাক্ত ১৯৮ জন ও মৃত্যু একজনের।

বাংলাদেশে ফের করোনা সংক্রমণের শঙ্কা দেখা দেওয়ায় দেশব্যাপী নতুন করে তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফাইজার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রমের প্রথম, দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ বিতরণ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর ৯টি জায়গায় দেওয়া হচ্ছে করোনা টিকা।

নির্দেশনা অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড হাসপাতাল), শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে টিকা।

এর পরবর্তী ধাপে ঢাকার বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও সরকারি হাসপাতাল, ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন বিতরণের মাধ্যমে কোডিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

আড়াই কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ
সরকারের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) সূত্রে জানা গেছে, আড়াই কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহ নিশ্চিত করেছে। ২০২৪ ও ২০২৫ সালে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে চতুর্থ ডোজ হিসেবে এসব টিকা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্যসচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় টিকাকেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। টিকা কার্যক্রম চলছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব) জনগোষ্ঠী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রাধান্য দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সবাইকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

 

এস

সম্পর্কিত বিষয়:

×