ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয় : জাহিদ মালেক

প্রকাশিত: ১৭:১৯, ২৪ জুলাই ২০২৩

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয় : জাহিদ মালেক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

দেশে চলমান ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি হাসপাতালসহ প্রায় সব ধরণের বেসরকারি হাসপাতালেই দেয়া হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা। কিন্তু প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। ফলে রোগীর সেবায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সব শ্রেণী থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কাজ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ চিকিৎসা সেবা দেয়া। আমরা সেটা দিচ্ছি। কিন্তু ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিধন করা আমাদের কাজ নয়।  

সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কে-৮০ ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে, আমরা বলেছি জ্বর হলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে। আপনারা জানেন আমরা সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ৫০ টাকা করে দিয়েছি। আমরা দেখছি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা শহরে ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে সঙ্গে সারাদেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের মূল কথা হলো ডেঙ্গু মশা কমাতে হবে, তাহলে ডেঙ্গু  রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে শুধু বর্ষা মৌসুমে নয়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও বিভিন্ন পৌরসভায় মশা নিধনের কাজটি সারা বছর করতে হবে।

এসময় অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের ধর্মঘট বি য়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন কী কারণে তারা ধর্মঘট ডেকেছে সে বিষয়টি আমার জানা নেই, তাই আমি ভালো কিছু বলতে পারব না।  দেশে একটি সমস্যা চলছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বাড়ছে। এখন সময় নয় ধর্মঘট করার। মানুষের সেবা, জীবন রক্ষা এবং চিকিৎসা সেবার এখন প্রয়োজন। সেটি বন্ধ করে দিয়ে আমরা ধর্মঘটে চলে গেলাম। এটি আমি সঠিকভাবে নিতে পারছি না। তারপরেও তাদের কী সমস্যা আছে, সেই সমস্যার যেন সমাধান হয় সেটি আমরা করার চেষ্টা করব এবং লক্ষ্য রাখব।

এর আগে নতুন ভর্তি হওয়া এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে যারা নতুন এমবিবিএসে ভর্তি হয়েছে আমি তাদেরকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। আমি ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, কিন্তু এখানে ভর্তি হতে পারিনি। এখান থেকে যারা চিকিৎসক হয়ে বেরিয়ে যাবে তাদের ঢাকা মেডিকেলের সুনাম ধরে রাখতে হবে। এই সুনাম ধরে রাখার একমাত্র পন্থা হলো এখান  থেকে ভালোভাবে শিক্ষা লাভ করা এবং এখান থেকে পাস করে বেরিয়ে যাওয়া।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে গেছেন। শেখ হাসিনার সময়োপযোগী প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশের সর্বত্র এখন নারীর ক্ষমতায়ন ঘটেছে। মহান জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে, পুলিশ বলেন, কোর্ট কাচারী বলেন কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বলেন সবখানেই নারীরা এখন এগিয়ে এসেছে। এ বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তিকৃত ২৩০ জনের মধ্যে ১২০ জনই নারী। বাকী ১১০ জন ছেলে। কিছুদিন আগে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ হাজার জনই নারী, পুরুষ ৪ হাজার। বিসিএস পরীক্ষায় নারীরা এগিয়ে থাকছে। নারীরা ব্যবসা করে পরিবার চালাচ্ছে, স্বাবলম্বী হচ্ছে। এগুলো এমনি এমনি হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় বড় স্বপ্নের মধ্যে নারীর ক্ষমতায়নও অন্যতম একটি। প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টাতেই বাংলাদেশে নারীরা এখন পুরুষের সঙ্গে সমান ভূমিকা রেখে চলেছে, বাংলাদেশকে উন্নত অবস্থানে নিয়ে যাচ্ছে।

মেডিকেল নিয়ে পড়ালেখা করে ইদানিং অনেকেই বিসিএস দিয়ে প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি মেডিকেলে একজন শিক্ষার্থীকে এমবিবিএস সম্পন্ন করাতে সরকারের কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। এগুলো জনগণের ট্যাক্সের টাকা। জনগণ শিক্ষার্থীদের  মেডিকেল পড়ার খরচ বহন করে, ভবিষ্যতে তারা চিকিৎসক হয়ে জনগণের চিকিৎসা দেবে সেজন্য। কিন্তু তারা সেটা না করে বিসিএস দিয়ে পুলিশ বা প্রশাসন ক্যাডারে চলে গেলে জনগণের কোটি কোটি টাকার অপচয় হয়। যে পেশায় এত বছর পড়ালেখা করে চিকিৎসক হয়ে সেখান থেকে অন্য পেশায় চলে  গেলে চিকিৎসক পেশায় পড়ালেখা করার প্রয়োজন তো ছিল না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোঃ শফিকুল আলম চৌধুরী-এর সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তাফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোঃ টিটো মিঞা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জে. মো. নাজমুল হক, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান মিলনসহ অন্যান্য নেতারা।
 

 

স্বপ্না

সম্পর্কিত বিষয়:

×