ফাইল ছবি
হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও নার্সদের ঠিকভাবেকাজে লাগানো হচ্ছে না। আর তাই রোগীরা সঙ্গে করে একাধিক সহকারী আনছেন ও রাখছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেছেন, সরকারি হাসপাতালগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায় প্রতিটি রোগীর সঙ্গে তিন থেকে পাঁচ জন করে ভিজিটর থাকে। এমনকি তারা রাতেও হাসপাতালে অবস্থান করে। এতে হাসপাতালে মূল রোগীদের সেবা পাওয়া বিঘ্নিত হয়। এর মানে হচ্ছে হাসপাতালে নিয়োপ্রাপ্ত কর্মচারী ও নার্সদের ঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। এজন্যই রোগীরা সঙ্গে করে একাধিক ‘এটেন্ডেন্টস’ আনছেন ও রাখছেন। তাই এখন থেকে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের নার্স ও কর্মচারীদের সঠিকভাবে কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে একটি বিশেষ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত কর্মচারীদের নিজ নিজ কাজে অবহেলার জন্যই হাসপাতাল পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন হচ্ছে না, রোগীদের সঙ্গে থাকা লোকদের ভিড় থামানো যাচ্ছে না, দালালদের দৌরাত্ম্য কমানো যাচ্ছে না। এর ফলে হাসপাতালের সেবার মানও কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেওয়া যাচ্ছে না।
এ সময় উপস্থিত সকল সিভিল সার্জন্স, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ও বিভাগীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষজন কাক্সিক্ষত সরকারি সেবা পাবে না, এটা চলতে পারে না। হাসপাতালে যার যা ডিউটি তাকে সেটিই করতে হবে। তা না হলে নির্দিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন রাখতেই হবে রোগী কম বা বেশি যাই থাকুক। এসময় মন্ত্রী দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সেবামূলক কাজের মান আরও কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, কীভাবে হাসপাতালগুলো মানসম্পন্ন ও পরিচ্ছন্ন রাখা যায়, কর্মচারী ও নার্সদের ডিউটি বাড়িয়ে দিয়ে কীভাবে রোগীর সঙ্গে অতিরিক্ত ভিজিটর কমানো যায়, নার্স ও ডাক্তারদের চলমান ডিউটি কতটা কার্যকর হচ্ছে ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ করণীয় বিষয়গুলো তুলে ধরে কর্মশালায় উপস্থিত ও জুম লাইভে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন।
দেশের মানুষের জন্য সেবা মান বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, প্রতিদিন সারাদেশে অন্তত: ১০ লাখ সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসে। ১০ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়ার জন্য জেলা শহর থেকে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি হাসপাতাল করা হয়েছে। লোকবল আমাদের ঘাটতি আছে ঠিকই, তবে আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে সেটি দিয়েই দেশের মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে হবে। এজন্যই যারা যারা হাসপাতালে কর্মরত আছে তাদেরকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
জাহিদ মালেক আরও বলেন, দেশের মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রশংসার পাশাপাশি অভিযোগও নিয়মিতই করছে। এই অভিযোগগুলো সব সত্যি না হলেও কিছু তো সত্যি। সরকারি সেবা পাওয়ার ঘাটতি নিয়ে মানুষের অভিযোগগুলোকে আমাদেরকে গুরুত্ব দিতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোকে পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি দেশের সব সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবামূলক কাজের মান বাড়াতেই হবে।
স্বাস্থ্যে বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট যতটুকুই বাড়ুক, বাড়ানো হয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ সঠিক সেবা পাবে বলেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বাস্থ্যখাতের দিকে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবায় অবহেলা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব ড. মুহ. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন), অতিরিক্ত মহাপরিচালকসহ (পরিকল্পনা) বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সিভিল সার্জন্স ও হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কগণ।
স্বপ্না