ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিএসএমএমইউতে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বিএসএমএমইউতে সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল উদ্বোধন

বিএসএমএমইউ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথম ক্যাডাভেরিক (মরণোত্তর) অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নামে ‘সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল’ এর উদ্বোধন করা হয়েছে।

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে এই সেলের উদ্বোধন করা হয়। এরপর বি-ব্লকের শহীদ ডা. মিলন হলে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার নামা জমা দেন।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ- উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেন। তারা অঙ্গীকারনামা ক্যাডাভেরিক সেলে জমা দেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহানসহ অনেকেই মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারাহ ইসলাম একটি অসাধারণ কাজ করেছেন। তার পথ ধরে অনেকেই ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানে এগিয়ে আসবেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদও ক্যাডাভেরিক অঙ্গদানের অঙ্গীকার করেছেন। ভবিষ্যতে আমি নিজেও এধরনের মহতী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারি সেটা আমার বিবেচনায় রয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, একজন ব্রেন ডেথ মানুষের দেওয়া অঙ্গগুলোর মাধ্যমে মোট আটজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব। দুটি কিডনি, দুটি ফুসফুস, একটি হৃদযন্ত্র, একটি অগ্ন্যাশয়, পূর্ণাঙ্গ অন্ত্রনালি এবং যকৃৎ। উন্নত দেশগুলোয় অনেক আগে থেকে ব্রেন ডেথ রোগীর শরীর থেকে অঙ্গগুলো সংগ্রহ করে অন্যের জীবন রক্ষা করার কাজ প্রচলিত আছে।

প্রথম ক্যাডাভেরিক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাহ ইসলাম মেধাবী একজন ছাত্রী ছিলেন। জটিল এই রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চারুকলায় ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি সুদক্ষ চিত্রশল্পী ছিলেন, মানবতাবাদী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তাই তার মা শবনম সুলতানা তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এই অঙ্গদানে সম্মতি দিয়েছেন। সম্মতি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করা হয় সঠিক অঙ্গগ্রহীতার খোঁজা। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে ছয়জন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষা করে সেখান থেকে দুজনকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১০টা থেকে জটিল এই অস্ত্রোপচার শুরু হয় এবং শেষ হয় পরদিন ভোর প্রায় পাঁচটার দিকে। 

আইন অনুযায়ী গঠিত প্রতিটি টিম এখানে সুদক্ষভাবে কাজ করেছে। প্রতিস্থাপন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউরোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। ইউরোলজিস্ট, নেফ্রোলজিস্ট, আইসিইউ বিশেষজ্ঞ, কিডনি ফাউন্ডেশন, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান কমিটির সবাই সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজে যারা যুক্ত ছিলেন সকলকে অভিনন্দন জানাই।

বিএসএমএমইউ আরও বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সারাহ ইসলামই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ব্রেন ডেথ থেকে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গ দান করে চারজন মানুষের জীবনে আশা জাগিয়ে গেলেন। সারাহ ইসলামের দিয়ে যাওয়া উপহার সবচেয়ে দামি উপহার। একজন মানুষ কতটুকু মহান হলে এই কাজ করতে পারেন, সারাহ তা দেখিয়ে দিয়েছেন। 

তিনি দেখিয়েছেন মৃত্যুকে কীভাবে পরাজিত করা যায়। তিনি দেখিয়েছেন মৃত্যুর পরও সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকা যায়, মৃত্যুর পরও কীভাবে অন্য মানুষের উপকার করা যায়। আমার কাছে সারাহ ইসলাম হলো মানবতার প্রকৃত ফেরিওয়ালা। নশ্বর দেহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপর এক প্রাণের নাম হলো সারাহ ইসলাম। বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে এই নাম চিরদিন খোদাই হয়ে থাকবে। মানবতার জগতে সারাহ আমাদের কাছে এক অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবেন।

এর আগে সকালে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ ও সারাহ ইসলামের মা শবনম সুলতানা কেবিন ব্লকের ৪০০ নম্বর কক্ষে ‘সারাহ ইসলাম ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট সেল’ এর উদ্বোধন করেন।

এমএস

সম্পর্কিত বিষয়:

×