স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
দেশের বড় সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপর নির্ভরশীল। এই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকালে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হন। যা সঠিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের প্রধান বাঁধা হয়ে দেখা দেয়। এসব কারণেই দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকদের সংখ্যা কম। তবে চ্যালেঞ্জগুলো জেনে সেগুলো সমাধান করা গেলে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি কমিয়ে উন্নত সেবা দেয়ার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিকিৎসকদের কর্মস্থল নিয়ে গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ‘বাংলাদেশের জেলা হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে চিকিৎসকদের চ্যালঞ্জসমূহ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদনের উপস্থাপনের সময় প্রধান গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেকুজ্জামান জানান, দেশের ৯টি জেলা হাসপাতাল এবং ১৭ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সার্ভে চেকলিস্টের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোতে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ৭ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা/সিভিল সার্জন/সুপারিনটেনডেন্ট/মেডিকেল অফিসার/আবাসিক মেডিকেল অফিসারদের স্বাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য পর্যালোচনা করে গবেষণাটি সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের শতভাগ জেলা হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবাটি থাকলেও ৪১.২শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই সেবাটি পাওয়া যায়নি। জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথাক্রমে ৮৮.৯শতাংশ এবং ৪১.২শতাংশ ক্ষেত্রে এক্স-রে পরিষেবা পাওয়া গেছে। ৮৮.৯শতাংশ জেলা হাসপাতাল এবং ৭৬.৫শতাংশ উপজেলা কমপ্লেক্সে ইসিজি পরিষেবা পাওয়া গেছে। একইভাবে ৪৪.৪শতাংশ জেলা হাসপাতালে এবং ১১.৮শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রাসনোগ্রাম সুবিধা পাওয়া গেছে। এছাড়া ৭৭.৮ শতাং জেলা হাসপাতালে এবং ৬৪.৭ শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মহিলা রোগীদের/অ্যাটেনডেন্টদের জন্য আলাদা টয়লেট এর ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, শতভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ডরমেটরি/কোয়ার্টার সুবিধা থাকলেও জেলা হাসপাতালে এর উপস্থিতি ৪৪.৪শতাংশ। এছাড়া ৫২.৯শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য ব্যবহার উপযোগী ডরমেটরি/কোয়ার্টার পাওয়া গেলেও জেলা হাসপাতালে এর পরিমাণ ০শতাংশ। ২০শতাংশ জেলা হাসপাতালে এবং ১৭.৬শতাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের জন্য থাকা ডরমেটরি/কোয়ার্টারে গার্ড থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এসময় জানানো হয়, জেলা হাসপাতালে ৩০শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৩শতাংশ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূণ্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে ৫১শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষে ৭৭শতাংশ জুনিয়র/সিনিয়র কনসালটেন্ট পদ শূণ্য রয়েছে। জেলা হাসপাতালে ৬৫শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৮ শতাংশ মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন পদ শূণ্য রয়েছে। নার্সিং স্টাফ/মিডওয়াইফ পদের ক্ষেত্রে জেলা হাসপাতালে ১৫শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৫শতাংশ পদ শূণ্য পাওয়া গেছে। জেলা হাসপাতালে ৫১শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪২শতাংশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট/টেকনিশিয়ান পদ শূণ্য পাওয়া গেছে। জেলা হাসপাতালে ২০শতাংশ ক্লিনার পদ শূণ্য থাকলেও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূণ্য ক্লিনার পদের পরিমাণ ৬৬শতাংশ। আর জেলা হাসপাতালে ৩১শতাংশ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৩শতাংশ নিরাপত্তা প্রহরী বা আনসারের পদ শূণ্য পাওয়া গেছে।
এসব তথ্যের ভিত্তিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। এটা সত্য। হাসপাতালে রাজনৈতিক চাপ থাকলে এমন সামাজিক অবস্থা রাতারাতি পরিবর্তন হবে না।
উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালগুলোর অব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, এসব হাসপাতালে অর্ধেকেরও কম মেশিন কার্যকর। সে কারণে হাসপাতালে আসা রোগীদের সব পরীক্ষা বাইরে করতে হয়। এর দায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জনদের।
এসময় বিএসএমএমইউ সম্পর্কে জাহিদ মালেক বলেন, আমি জানি জনগণের টাকায় এ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হয়েছে। সেজন্য তাদের কথা মাথায় রাখতে হবে। এছাড়াও এ হাসপাতালের চিকিৎসকদের পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা ছিল। প্রধানমন্ত্রী সেটা সংশোধন করে দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সব স্তরের শূণ্য পদ পূরণ করা প্রয়োজন। শুধু তাই নয় দক্ষতা অনুযায়ী চিকিৎসকদের যথাযথ পোস্টিং নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পোস্টিং, বদলি এবং পদোন্নতির জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি এবং বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র আমুল পরিবর্তন হয়ে যাবে। যার সুফল পাবেন সেবা নিতে আসা প্রত্যেক রোগীই।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী ও অধ্যাপক ডাক্তার টিটু মিয়া।
স্বপ্না