
কোমরে ব্যথাজনিত রোগে ভুগেন
প্রত্যেক মানুষই তার জীবনে কোমরে ব্যথাজনিত রোগে ভুগেন। কোমর ব্যথা এমন এক ব্যথা যা সহজে মুক্তি দিতে চায় না। উঠতে, বসতে, এমনকি ঘুমোতে গেলেও ব্যথা থেকেই যায়। দীর্ঘসময় বসে একটানা কাজ করলে এ ব্যথা হয়।?তবে কোমর ব্যথার আরও বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো-
কোমর ব্যথার কারণ
লাম্বার স্পনডাইলোসিস-
কোমরে পাঁচটি হাড় আছে। এই হাড়গুলো যদি বয়সের কারণে বা বংশগত কারণে ক্ষয় হয়ে যায়, তখন তাকে লাম্বার স্পনডাইলোসিস বলে।
পিএল আইডি-
কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ পিএল আইডি। ৩০ থেকে ৪০ বছর যাদের বয়স তাদের এ সমস্যাটি হতে পারে। মানুষের হাড়ের মধ্যে ফাঁকা জায়গা থাকে। এই ফাঁকা জায়গাটি পূরণ থাকে তালের শাঁসের মতো ডিস্ক বা চাকতি দিয়ে। এই চাকতি যদি কোন কারণে বের হয়ে যায়, তখন স্নায়ুর ওপরে চাপ পরে। যার ফলে কোমরে ব্যথা তৈরি হয়।
নন স্পেসিফিক লো ব্যাক পেইন-
মূলত অনির্দিষ্ট কারণে হাড়, মাংসপেশি, স্নায়ু তিনটি উপাদানের সামঞ্জস্য নষ্ট হলে এই ব্যথা হয়। এই সমস্যাটি তরুণ বয়সে বেশি হয়ে থাকে।
অন্যান্য কারণ-
এছাড়া বিভিন্ন কারণে কোমরে ব্যথা হয়। মেরুদ-ের টিউমার ও ইনফেকশন হলে কোমরে ব্যথা হয়। মাংসপেশি শক্ত হয়ে গেলে বা মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়লে কোমরে ব্যথা হয়। শরীরের ওজন বেড়ে গেলে কোমরে ব্যথা হয়। একটানা হাঁটলে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কিংবা কোলে কিছু বহন করলে কোমরে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কোমর ব্যথার লক্ষণ
কোমর ব্যথার লক্ষণ, যা কোমরের পেছন দিয়ে ঊরুর পেছন দিয়ে, কাফ মাসেলের পেছন দিয়ে পায়ের বুড়ো আঙ্গুল বা ছোট আঙ্গুলে চলে আসে। এছাড়াও কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে, যেমনÑ আপনার দীর্ঘ সময়ের জন্য বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা আরও খারাপ হওয়া। অনেক সময় ব্যথা পা এবং হাঁটুতে ছড়িয়ে পড়ে। উঠতে ও বসতে পিঠে সারাক্ষণ ব্যথা হওয়া।
কোমর ব্যথায় ঘরোয়া চিকিৎসা নিন
সেক দিন : কোমরের যে জায়গায় ব্যথা হয় সেখানে সেক দিলে যন্ত্রণা থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যায় তবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কোন সেক দেবেন এ ব্যাপারে পরামর্শ মেনে গরম অথবা ঠা-া সেক দিলে বেশি উপকৃত হবেন
আদা : আদাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এই পটাশিয়ামের অভাবের ফলে নার্ভের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম মেনে আদা খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হলুদ : দুধের সঙ্গে নিয়ম করে হলুদ খেলে কোমরের ব্যথা অনেকটা কম হয়।
লেবুর শরবত : লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। ভিটামিন সি যন্ত্রণা উপশমে খুবই উপকারী।
এ্যালোভেরা : প্রতিদিন নিয়ম করে এ্যালোভেরা শরবত খেলে ব্যথা থেকে মুক্তি মিলবে।
ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জাতীয় খাদ্যÑ প্রতিদিন নিয়ম করে দুধ, ঘি, পনির, ফল, শাকসবজি, বাদাম ইত্যাদি খেলে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
এছাড়া একই স্থানে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। মাঝে মাঝে জায়গা ছেড়ে একটু হাঁটুন। ফোনে কথা বলার সময় হেঁটে হেঁটে কথা বলুন। দিনে যত বেশি হাঁটবেন, তত দীর্ঘদিন শরীরের অবস্থা ভাল থাকবে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করবেন না।
এছাড়া একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের অধীনে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে কোমর ব্যথা থেকে উপশম মিলবে। আবার কিছু কিছু কন্ডিশনে সার্জারি প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত কিছু ব্যায়াম এবং কিছু নিয়ম মেনে চললে কোমর ব্যথা থেকে উপশম পাবেন খুব সহজেই।
লেখক : চেয়ারম্যান ও চীফ কনসালটেন্ট (ফিজিওথেরাপি ) রিএকটিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার ৪০৭, শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ এভিনিউ, ফিনিক্স টাওয়ার, (৬ তলা) সাতরাস্তা, তেজগাঁও, ঢাকা।
প্রয়োজনে- ০১৭১৬৪৫৩২০৫