ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২

শ্বেতী রোগ নিয়ে জানুন

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৮ মে ২০২১

শ্বেতী রোগ নিয়ে জানুন

শ্বেতি রোগ নিয়ে জানুন অজ্ঞতার কারণে শ্বেতি আক্রান্ত রোগীকে দেখলে আঁতকে ওঠেন অনেকে। এই রোগ নিয়ে সাধারণের মনে অনেক কুসংস্কার আর ভ্রান্তি আছে। এটি কোন ছোঁয়াচে বা অভিশপ্ত রোগ নয়, আর যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে শ্বেতি নিয়েও ভাল থাকা যায়। শ্বেতি বা ধবল রোগ কি শ্বেতি ত্বকের একটি রোগ। ইংরেজী নাম লিউকোডারমা বা ভিটিলিগো। শ্বেতি আক্রান্ত রোগীকে দেখলে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। শ্বেতি রোগীরা বেশির ভাগই মানসিক অবসাদে ভোগেন। অন্যরাও তাদের এড়িয়ে চলেন। কিন্তু এটি ছোঁয়াচে বা অভিশপ্ত কোন রোগ নয়, কুসংস্কার এড়িয়ে যথাযথ চিকিৎসা নিলে ভাল থাকা যায়। আমাদের ত্বকের মধ্যে মেলানোসাইট কোষে থাকে মেলানিন, যা ত্বকের স্বাভাবিক রঙের ভারসাম্য রক্ষা করে। মেলানিনের ক্রিয়াকলাপে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে দেখা দেয় শ্বেতি। শ্বেতি বা ধবল বংশগত কারণে হতে পারে। প্রতি ১০০ জন শ্বেতি রোগীর মধ্যে ৩০ জনের ক্ষেত্রেই শ্বেতি হয় বংশগত ধারায়, মাতৃ বা পিতৃকুলের কারও না কারও থেকে জিনের প্রভাবে। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে শ্বেতি সাদা দাগ ছড়াতে থাকে নিজস্ব কারণে, যার মূলে রয়েছে মেলানিনের কারসাজি! বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি মানুষ শ্বেতিতে আক্রান্ত। প্রয়াত শিল্পী মাইকেল জ্যাকসনও এই রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তাই প্রতিবছর ২৬ জুন তাঁর প্রয়াণ দিবসে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ‘ওয়ার্ল্ড ভিটিলিগো ডে’ বা বিশ্ব শ্বেতি দিবস হিসেবে। সাধারণত মুখমণ্ডল, কনুই, বুকের ত্বক প্রথমে আক্রান্ত হতে শুরু করে। কখনও কখনও শ্বেতি চোখের পাশ দিয়ে, নাকের দুই পাশে বা ঠোঁটের কোণ বা ওপরের ত্বকেও শুরু হয়। কারও কারও ক্ষেত্রে শ্বেতি খুব একটা ছড়ায় না, একটা বিশেষ জায়গাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। আবার কারও এমনভাবে মুখে, বুকে, হাতে, পায়ে ছড়িয়ে পড়ে যে বোঝাই যায় না এক সময় গায়ের রং আসলে কী ছিল! দ্বিতীয় ধরনের শ্বেতির দাগই মানুষকে শ্রীহীন করে তোলে। ৫০ শতাংশ শ্বেতি ধরা পড়ে বয়স বছর দশেক হওয়ার পর। শ্বেতি রোগে জীবনাচরণ এটি একটি অটোইমিউন রোগ, আর এর সঙ্গে অন্যান্য অটোইমিউন রোগ সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে। যেমন পরিপাকতন্ত্রের কিছু সমস্যা, থাইরয়েড বা অন্যান্য হরমোনের রোগ, টাইপ-১ ডায়াবেটিস ইত্যাদি। তাই অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যার দিকেও নজর দিতে হবে। শ্বেতি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মানসিক চাপ রোগটিকে ত্বকের অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়তে সাহায্য করে। কারণ, মানসিক চাপ ইমিউন সিস্টেমকে আরও দুর্বল করে দেয়। ক্যাফেইন, ডার্ক চকলেট, গ্লুুটেন, দুধ বা দুগ্ধজাত পণ্য, সাদা চিনি এবং সাইট্রাস ফলের মতো কিছু সাধারণ খাবার শ্বেতি রোগকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। কোন কোন খাবারে সমস্যা বাড়ে, তা লক্ষ্য করুন আর নোট করুন। আখরোট, পেঁপে বেশি করে খাবেন। ভিটামিন বি, সি এবং এ্যামিনো এ্যাসিডসমৃদ্ধ স্বাস্থ্যকর সুষম খাবার গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে এ্যামিনো এ্যাসিড পেতে প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান। এ ছাড়া অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য খাবার তালিকায় প্রোবায়োটিকস এবং প্রিবায়োটিকস অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অনেকেই শ্বেতি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে ত্বকের বাইরের অংশে কিছু উপকরণের প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন হলুদের গুঁড়া ও শর্ষের তেলের মিশ্রণ। এতে কোন ক্ষতি নেই। এ ছাড়া তুলসী বা পুদিনাপাতা পিষে তা লেবু রসে মিশিয়ে পেস্ট করে অনেকে ব্যবহার করেন। শ্বেতি রোগের আরেকটি কারণ হলো কপারের ঘাটতি। বাদাম, বীজ এবং সবুজ সবজি তামাসমৃদ্ধ খাবার। তামার পাত্রে সংরক্ষণ করা পানি পান করে আপনি উপাদানটির ঘাটতি পূরণ করতে পারেন। আয়রন ও দস্তাসমৃদ্ধ খাবারও গুরুত্বপূর্ণ। বাদাম, বীজ, শাক এবং সবুজ সবজি দস্তাসমৃদ্ধ। শ্বেতি নিয়ে ভালো থাকতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখা। সুতরাং সক্রিয় থাকুন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন। চিকিৎসা কি ছোট আকৃতির ও সীমিত শ্বেতি মলম বা ওষুধে সেরে যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মলম লাগানো বা ওষুধ সেবনের পাশাপাশি সকালবেলার রোদ লাগাতে হবে শ্বেতি আক্রান্ত স্থানে। বড় আকারের শ্বেতি হলে মলম আর ওষুধে কাজ হতে প্রায় দুই বছর লাগতে পারে। ওষুধে কাজ না হলে অস্ত্রোপচার। শ্বেতি চিকিৎসায় যে অস্ত্রোপচার করা হয়, তার নাম পাঞ্চ গ্রাফটিং। যে ধরনের শ্বেতি বছর দুয়েক মোটামুটি একই জায়গায় অবস্থান করে, সেই শ্বেতি সারিয়ে তুলতে পারে এই পাঞ্চ গ্রাফটিং। যত অল্প বয়সে শ্বেতির চিকিৎসা শুরু করা যায় তত ভাল। তাই শরীরের যে কোন জায়গায় সাদা দাগ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ডাঃ জাহেদ পারভেজ ত্বক, চর্ম ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন সহকারী অধ্যাপক, চর্ম যৌন ও এ্যালার্জি রোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, চেম্বার : ডাঃ জাহেদ’স হেয়ার এ্যান্ড স্কিনিক সাবামুন টাওয়ার (ষষ্ঠতলা), পান্থপথ, ঢাকা ০১৭০৭০১১২০০; ০১৭৩০৭১৬০৬০
×