ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১

নবজাতকের ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু কথা

প্রকাশিত: ০০:০১, ১৮ মে ২০২১

নবজাতকের ডায়াবেটিস নিয়ে কিছু কথা

অনেকের ধারণা ডায়াবেটিস রোগটি শুধু বয়স্কদের হয়ে থাকে। কিন্তু হালজামানায় দেখা যাচ্ছে- নবজাতকের রক্তেও চিনির মাত্রা বেশি অর্থাৎ তারাও আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগে। বিষয়টি যথেষ্ট দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে ভুক্তভোগী অভিবাবকদের। যে শিশুটিকে নিয়ে মা-বাবার মনে আশা-আনন্দের জোয়ার সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল তাকে নিয়েই তৈরি হচ্ছে শঙ্কার কালো মেঘ। শিশুর ছয় মাস বয়সের পূর্বেই যে ডায়াবেটিস হয় তাকেই বলা যায় নবজাতকের ডায়াবেটিস। শিশুদের আরেক ধরনের ডায়াবেটিস হয়ে থাকে যাকে বলা হয় টাইপ-১ ডায়াবেটিস। তবে মনে রাখা দরকার ছয় মাস বয়সের আগে টাইপ-১ ডায়াবেটিস সাধারণত হয় না। টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলো এক বিশেষ ধরনের ডায়াবেটিস যার জন্য আজীবন আক্রান্ত রোগীকে ইনসুলিনের উপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। নবজাতকের ডায়াবেটিস আর টাইপ-১ ডায়াবেটিস এক নয় মোটেও। চিকিৎসায়ও অনেক ক্ষেত্রে রকমফের রয়েছে। নবজাতকের ডায়াবেটিসের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করার প্রয়োজন পড়ে না। বরং ইনসুলিন দিয়ে চিকিৎসা করলে তাদের অনেকের মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্থায়ুর ক্ষতি হতে পারে। তাদের চিকিৎসার জন্য ডায়াবেটিসের এক বিশেষ ট্যাবলেট হলো মোক্ষম দাওয়াই। তবে তার আগে বুঝে নিতে হবে ডায়াবেটিসের ধরন এবং পেছনের কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সদ্যজাত শিশুর রক্তে চিনির মাত্রা বেশি পাওয়া যায়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রথম দশ দিনেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। এটি নবজাতকের ডায়াবেটিস নাও হতে পারে। এটি হতে পারে নিছক ক্ষাণিক সময়ের জন্য রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা। এটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষার বলা হয়ে থাকে নিওনেটাল হাইপারগ্লাইসেমিয়া। সুতরাং কোন কারণে সদ্যজাত শিশুর রক্তে চিনির মাত্রা বেশি পেলেই ঘাবড়ে যাওয়ার দরকার নেই। অনেক কারণেই এমনটি হতে পারে। সাধারণত শিশুর সেপসিস বা বড় ইনফেকশন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ কিংবা শিরাপথে গ্লুুকোজ স্যালাইন দেয়ার পর এমনটি হতে পারে। তবে নবজাতকের রক্তে চিনির মাত্রা দুই সপ্তাহের পরও স্থায়ী হলে অবশ্যই ভাবতে হবে নবজাতকের ডায়াবেটিস নিয়ে। নবজাতকের ডায়াবেটিসের কারণ কি? কারণ হলোÑজিনগত ত্রুটি। এর পেছনের কারণ নিয়ে মানুষের জ্ঞান একেবারেই সীমিত। ডায়াবেটিস হয়ে থাকে মূলত ইনসুলিনের অভাবে। অগ্ন্যাশয়ের এক বিশেষ কোষের নাম হলো বিটা কোষ। এই কোষে উৎপাদন হয় ইনসুলিন। শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের পর এই কোষ থেকে নিঃসরিত হতে থাকে ইনসুলিন। বিশেষ কিছু জিনগত ত্রুটির কারণে এই কোষ ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। ফলে দেখা দেয় এই বিশেষ ধরনের নিওনেটাল তথা নবজাতকের ডায়াবেটিস। আশার কথা হলো এই ডায়াবেটিস শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে হতে পারে একেবারে অল্প কিছু দিনের জন্য। সাময়িক সময়ের এই ডায়াবেটিস কখনও সখনো সম্পূর্ণ ভাল হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে এটি শৈশবকালীন সময়ে ফের হানা দিতে পারে। আরেক ধরনের নবজাতকের ডায়াবেটিস আজীবন থেকে যেতে পারে। কি করে বুঝবেন নবজাতকের ডায়াবেটিস? অনেক ক্ষেত্রেই শুরুতে ঠাওর করা মুশকিল। শিশুর ঘন ঘন পেশাব হওয়া, বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হওয়া শুরুর লক্ষণ। যে বয়সে হামাগুঁড়ি দেয়ার কথা, বসতে কিংবা হাঁটতে শিখার কথা সেগুলো যদি বিলম্বে ঘটতে থাকে, যদি পেশিতে দুর্বলতা অনুভূত হয়, যদি বুদ্ধি বৈকল্য দেখা দেয়, যদি খিঁচুনি হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে রক্তে চিনির মাত্রা কেমন। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ে বিলম্ব হতে পারে। শিশুর ছয় মাস বয়স অতিক্রমের পর এমন রোগ নির্ণিত হলে টাইপ-১ ডায়াবেটিস এবং নিওনেটাল ডায়াবেটিসের পার্থক্য নির্ণয় করে নিতে হবেÑ চিকিৎসার ধরন নির্ধারণ করার জন্য। নবজাতকের ডায়াবেটিস চিকিৎসায় বিলম্ব হলে কিংবা ভুল হলে শিশুর জীবন বিপন্ন হতে পারে।ভয়ানক জটিলতা তৈরি হতে পারে। চক্ষু কিংবা কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। স্থায়ীভাবে দেখা দিতে পারে স্নায়ুবিক বৈকল্য। চিকিৎসা ক্ষেত্রবিশেষে সহজ। ডায়াবেটিসের সালফোনাইল ইউরিয়া গ্রুপের ট্যাবলেট হতে পারে সহজ চিকিৎসা আবার কারো ক্ষেত্রে লাগতে পারে ইনসুলিন। এটি নির্ভর করছে কোন ধরনের জীনের কারণে এই ডায়াবেটিস হচ্ছে তা নির্ণয় করা। আর তা করা গেলেই আক্রান্ত শিশুটি থাকবে শঙ্কামুক্ত। আমরা সেই শঙ্কামুক্ত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। ডাঃ নাসির উদ্দিন আহমদ এফসিপিএস (মেডিসিন) ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট সিএমএইচ, ঢাকা।
×