
ছবি: জনকণ্ঠ
রাজবাড়ী জেলায় দিন দিন বাড়ছে তামাক চাষের প্রবণতা। জেলার অনেক সাধারণ কৃষক তামাক কোম্পানির আর্থিক প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে ধান, গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের বদলে তামাক চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অল্প খরচে বেশি লাভের সুযোগ এবং একসঙ্গে বড় অঙ্কের অর্থ পাওয়ার লোভে তারা এ চাষে ঝুঁকছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কৃষকের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বয়ে আনবে এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণ, সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করছে। ফলন উৎপাদনের পূর্বে দাম নির্ধারিত থাকার কারণে লোকসানের ভয় থাকে না। এতে কৃষকরা বিনিয়োগের চাপ ছাড়াই চাষ করতে পারছেন এবং নিশ্চিতভাবে লাভবান হচ্ছেন।
কৃষক আবু বক্কর বলেন, ‘পেঁয়াজ-রসুন ও শাক সবজি এবং ধান চাষ করে সারা বছরে তেমন লাভ হয় না। তবে তামাক চাষে অল্প সময়ে বেশ ভালো আয় হচ্ছে। কোম্পানি সরাসরি টাকা দিচ্ছে, যা আমাদের জন্য বড় সুবিধা। কোম্পানি উৎপাদনের পূর্বে দাম নির্ধারণ করে দেয়। পেঁয়াজ-রসুন ও বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি উৎপাদনে লাভের নিশ্চয়তা দেওয়ার কেউ নেই।’
একই কথা জানালেন নারী কৃষক জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘তামাক চাষে পুঁজি বিনিয়োগ করার প্রয়োজন হয় না। তামাক কোম্পানি বিনিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে টাকা পরিশোধ করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তামাক চাষে পরিশ্রম বেশি, কিন্তু লাভও বেশি। লোকসানের ভয় থাকে না। একসঙ্গে অনেক টাকা হাতে আসে, তাই অনেকেই এটি করছে।’
জেলার অনেক কৃষক তামাক চাষে ঝুঁকে পড়ার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষি বিশেষজ্ঞরা। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘তামাক চাষের কারণে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। চাষে প্রচুর পানি ও কাঠের প্রয়োজন হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, চাষিরা তামাকের প্রক্রিয়াজাতকরণে সরাসরি ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসছেন যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।’
পরিবেশবিদরা বলছেন, ‘তামাক চাষে জমির গুণাগুণ কমে যায়, ফলে ভবিষ্যতে এখানে অন্যান্য ফসল ফলানো কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি, চাষকৃত তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বায়ুদূষণও ঘটে।’
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাগণ বলছেন, ‘তামাক চাষের ঝুঁকি সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করতে তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে শুধু প্রচারণা যথেষ্ট নয়, কার্যকর নীতিমালা দরকার। তামাক চাষ হয়ত অল্প সময়ে বেশি অর্থ দেয়, তবে এটি কৃষক, জমি এবং পরিবেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তামাক কোম্পানিগুলোর অসাধু প্রচারণা রোধে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অন্যথায়, রাজবাড়ীসহ দেশের অন্যান্য কৃষি অঞ্চলে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সংকট তৈরি হতে পারে।’
রাজবাড়ী জেলায় অবস্থিত “দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে” কর্মরত ডা. প্রান্ত বলেন, ‘শরীর সুস্থ রাখার কোন বিকল্প নেই। সুতরাং শরীর সুস্থ রাখতে অনেক কিছু থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। সেই হিসেবে সকল কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের, সাধারণ মানুষকে সচেতনতামূলক বক্তব্য দেওয়া উচিত।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক, ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সভা-সেমিনার ও কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে প্রচারণা করা হয়। এখন জেলায় তামাক চাষ পূর্বের চেয়ে অনেক কমে গেছে।’
শফিকুল/ সুরাইয়া