
ছবি: প্রতীকী
কিং কোবরা এবং কুমিরের মধ্যে লড়াইয়ে কে জয়ী হবে তা নির্ভর করে এ দুটির একক এবং বিশেষ শক্তির উপর। কিং কোবরা পৃথিবীর সবথেকে বড় বিষধর সাপ। কিং কোবরার অত্যন্ত বিষাক্ত বিষ দিয়ে এটি দ্রুততা এবং ক্ষিপ্রতার সাথে আক্রমণ করে। কিং কোবরার বিষ একটি হাতিকে মেরে ফেলার ক্ষমতা রাখে। অন্যদিকে কুমির নির্ভর করে এর বিশাল আকৃতি, শক্তি ও হাড়গুঁড়িয়ে দেওয়া কামড়ের উপর। কুমির কিং কোবরার থেকে কম গতিসম্পন্ন হলেও এর সহনশীলতা এবং শক্তিশালী বর্ম দিয়ে বাজিমাত করতে পারে।
এই নিবন্ধে, আকার- আকৃতি, বিষাক্ততা, গতি এবং আত্মরক্ষার ধরনের উপর ভিত্তি করে, কিং কোবরা এবং কুমিরের মধ্যকার পার্থক্যের বিশদ আলোচনা করা হয়েছে।
আকার
কিং কোবরা প্রায় ১০ থেকে ১৫ পাউন্ডের এবং ১২ থেকে ১৯ ফুটের একটি সরীসৃপ প্রাণী। এটি কুমিরের থেকে লম্বা এবং পাতলা।
কুমির ৪০০ থেকে ৮০০ পাউন্ডের যা অত্যন্ত ভারী এবং এটি লম্বায় ৮.২ থেকে ১৫ ফুটের। কুমিরের সর্বোচ্চ ওজন হতে পারে ১৩৮০ পাউন্ড। উচ্চ শারীরিক শক্তিসম্পন্ন হওয়ায় কুমির অন্য যেকোনো প্রাণীর সাথে মুখোমুখি লড়াইয়ে সুবিধা পায়।
গতি
কিং কোবরা কুমিরের থেকে কম গতিসম্পন্ন। এটি মাটিতে সর্বোচ্চ ১২ মাইল বেগে চলে এবং পানিতে এই গতি আরও কম।
কুমির মাটিতে বেশি দ্রুততার সাথে চলাচল করতে পারে। স্বল্প দূরত্বে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ মাইল। দূরত্ব বেশি হলে এর গতিবেগ কমে ৯ থেকে ১১ মাইল হয়। স্থল এবং জলজ উভয় পথে তীব্র গতিসম্পন্নতা কুমিরকে কিলিং মেশিন বা মারণ যন্ত্রে পরিণত করেছে।
আক্রমণের পদ্ধতি
বিষ হলো কিং কোবরার প্রধান অস্ত্র। এই প্রাণী যদি হুমকির সম্মুখীন হয় তাহলে এর বুকের উপর অর্ধেক দাঁড়িয়ে যায় এবং ০.৫ গভীর কামড় দেয়। এই কামড়ে প্রায় ১০০০ মিলিগ্রাম বিষ থাকে যা একটি হাতিকে ১ ঘণ্টার মধ্যে মেরে ফেলতে সক্ষম।
অন্যদিকে কুমিরের মরণফাঁদ কামড় হল এর প্রধান আক্রমণ। এর আছে ৮০টি তীক্ষ্ণ দাঁত যার সাহায্যে ২৯৮০ বর্গইঞ্চির চাপ প্রয়োগ করে এটি মুহূর্তেই শিকারকে টুকরো করে ফেলতে পারে।
আত্মরক্ষার পদ্ধতি
দুটি প্রাণিরই ভিন্ন এবং একক আত্মরক্ষার পদ্ধতি থাকলেও কুমির এই ক্ষেত্রে কিং কোবরা থেকে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত।
কিং কোবরা প্রাকৃতিকভাবে স্বল্প আত্মরক্ষার অধিকারী। এর বিষ নির্গমন ক্ষমতা ছাড়া আছে কেবল পালানোর পদ্ধতি এবং ফণা তুলে শিকারকে ভয় দেখানোর পদ্ধতি। অন্যদিকে কুমির আত্মরক্ষার দিক থেকে বেশি শক্তিশালী। এর প্রধান সুবিধা হলো পুরু ত্বক যা ভেদ করা প্রায় অসম্ভব। এটি অনায়াসে পানিতে সাঁতার কাটতে পারে এবং ক্যামোফ্লেজ ধারণ করতে পারে। এছাড়া কুমিরের রয়েছে বিষ সহ্য করার ক্ষমতা যা এটাকে কিং কোবরা ব্যতীত যেকোনো প্রাণীর কামড় থেকে নিরাপদ রাখে।
শিকার করার পদ্ধতি
কিং কোবরা এবং কুমির দুটিই হঠাৎ আক্রমণ করে। কিং কোবরা ঝোপ ঝাড়ের আড়াল থেকে ধৈর্য সহকারে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। শিকার কাছাকাছি আসলেই এটি কামড় দিয়ে শিকারের শরীরে বিষ প্রবেশ করিয়ে নিস্তেজ করে দেয়।
অন্যদিকে কুমির প্রায় পানির সাথে মিশে থাকে। কেবল চোখ ও নাক থাকে পানির উপরে। শিকার যখন পানি পান করতে আসে, তখন এটি আচমকা আক্রমণ করে শিকারকে পানির নিচে টেনে নেয়।
কিং কোবরা বনাম কুমির: কে জিতবে লড়াইয়ে?
আকার- আকৃতি, দ্রুততা, আক্রমণের ধরণ, আত্মরক্ষা এবং শিকারের ধরনের উপর ভিত্তি করে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় কুমির এই লড়াইয়ে জয়ী হবে।
কিং কোবরার বিষ অত্যন্ত বিষাক্ত হওয়ার পরও কুমিরের শারীরিক সহনশীলতা, শক্তি, এবং আকৃতি একে কিং কোবরার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে সহযোগিতা করে। কিং কোবরা এর বিষাক্ত চোয়াল দিয়ে কুমিরকে কামড় দিতে পারলেও কুমিরের পুরু ত্বক এই আক্রমণকে অকেজো করে ফেলে।
কুমির যখন এর কামড় এবং মরণফাঁদ বিস্তার করে তখন কুমিরের সামনে কিং কোবরার আক্রমণ অকেজো হয়ে যায় এবং এর পালানোর রাস্তা থাকে না।
তথ্যসূত্র,
টাইমস অব ইন্ডিয়া
সুরাইয়া