ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২

অবিশ্বাস্য দিকনির্দেশনায় পারদর্শী ১০ প্রাণী: যারা হাজার মাইল দূর থেকেও ফিরে আসে ঠিকানা খুঁজে

প্রকাশিত: ১৭:২২, ১৪ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৯:১৬, ১৪ এপ্রিল ২০২৫

অবিশ্বাস্য দিকনির্দেশনায় পারদর্শী ১০ প্রাণী: যারা হাজার মাইল দূর থেকেও ফিরে আসে ঠিকানা খুঁজে

ছবি : সংগৃহীত

 দিকনির্দেশনায় পারদর্শী ১০ প্রাণী: যারা হাজার মাইল দূর থেকেও ফিরে আসে ঠিকানা খুঁজে


আমরা মানুষ যেমন গুগল ম্যাপ বা কম্পাস ব্যবহার করি দিক নির্ধারণে, প্রকৃতির কিছু প্রাণী রয়েছে যারা নিখুঁতভাবে পথ খুঁজে নিতে পারে—তাও আবার হাজার হাজার মাইল দূর থেকে! তাদের এই অবাক করা ক্ষমতা শুধু বিজ্ঞানীদেরই নয়, সারা বিশ্বের প্রকৃতিপ্রেমীদেরও বিস্ময়ে মোহিত করে রেখেছে।

 জেনে নিই এমনই ১০টি বিস্ময়কর প্রাণীর কথা, যাদের দিকনির্দেশনার দক্ষতা অবিশ্বাস্যভাবে উন্নত।

 

 

 ১.পায়রা- প্রকৃতির চুম্বকীয় কম্পাস

শত শত মাইল দূর থেকেও পায়রা তাদের বাসার পথ খুঁজে পেতে পারে যেন খেলাচ্ছলে। পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, চারপাশের দৃশ্য এবং সূর্যের অবস্থান—এই তিনটি উপাদান একত্রে তাদের করে তুলেছে প্রাণিজগতের এক অনন্য দিকনির্দেশক।

 

 ২.স্যালমন মাছ – গন্ধেই খুঁজে নেয় শৈশবের নদীস্যালমন মাছদের জীবনযাত্রা যেন এক প্রকৃতির রোমাঞ্চকর যাত্রাপথ। তারা হাজার মাইল দূরের সমুদ্র থেকে নিজেদের জন্মস্থান নদীতে ফিরে আসে শুধুমাত্র গন্ধের অনুভূতি ব্যবহার করে। এ যেন এক জলজ হোমিং মিরাকল!


 

৩. লোগারহেড কচ্ছপ – মহাসাগরের ম্যারাথন যাত্রী

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রজননস্থল ও খাদ্যস্থলের মধ্যে লোগারহেড কচ্ছপরা ১০,০০০ মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করে! তারা এই দীর্ঘ অভিবাসনে দিকনির্দেশনার জন্য নির্ভর করে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ওপর।

 

৪. মনার্ক প্রজাপতি – পাখনার ছোঁয়ায় ৩,০০০ মাইলের অভিযান

উত্তর আমেরিকা থেকে মেক্সিকোর এক নির্দিষ্ট বনে প্রতি বছর ফিরে আসে এই প্রজাপতিরা। সূর্যের অবস্থান ও পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সহায়তায় তাদের এই অভাবনীয় যাত্রা আজও গবেষণার বিষয়।


 

৫. ইউরোপীয় স্যোয়ালো – দুই মহাদেশের দিকপাল

ইউরোপ ও উপ-সাহারীয় আফ্রিকার মধ্যবর্তী পথ প্রতি বছর পাড়ি দেয় এই পাখিরা। সূর্য, তারা ও চৌম্বক ক্ষেত্র তাদের পথের দিশারী। এদের অভিবাসন এখনো এক রহস্যময় অধ্যায় বিজ্ঞানের কাছে।


 

৬. ক্যারিবু –  ঠাণ্ডায় নির্ভুল দিকজ্ঞান

প্রতি মৌসুমে আর্কটিক টুন্ড্রা জুড়ে অভিবাসন করে ক্যারিবুরা। সূর্য, চৌম্বক ক্ষেত্র এমনকি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ পর্যন্ত ব্যবহার করে তারা তাদের পথ ঠিক রাখে!

 

 

৭. ডলফিন –  দিকপাল সমুদ্রচারী

ডলফিনরা প্রতিধ্বনি নির্ভর প্রযুক্তি (ইকোলোকেশন) ব্যবহার করে দিক নির্ধারণ করে। সমুদ্রস্রোত এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে তারা শিকার খোঁজা থেকে শুরু করে দীর্ঘ পথ চলতেও থাকে দক্ষ।


 

৮. ওয়ান্ডারিং অ্যালবাট্রস – আকাশে দিগন্ত ছোঁয়া এক অভিযান

হাজার হাজার মাইল দক্ষিণ মহাসাগরের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া এই পাখিদের দিকনির্দেশনায় সহায়ক হয় বাতাসের প্রবাহ ও চৌম্বক ক্ষেত্র। পাখিদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে দীর্ঘ পরিযায়ী এই প্রজাতি।


 

৯. পিপিলিকা – ক্ষুদ্র শরীর, দুর্দান্ত স্মৃতি

অনেক পিপিলিকা প্রজাতিই দীর্ঘ দূরত্ব অতিক্রম করার পর ফেরে নিজের বাসায়। সূর্যের অবস্থান এবং ফেরোমোনের দাগই তাদের দিকনির্দেশনার গোপন চাবিকাঠি।

 


১০. ধূসর নেকড়ে – বুনো প্রকৃতির অভ্যন্তরে এক নিঃশব্দ দিশারী

বিশাল এলাকার মধ্যে বিচরণ করে ধূসর নেকড়েরা, আর শিকারে বেরিয়ে ফেরে বাসায় গন্ধ, স্মৃতি ও চৌম্বক ক্ষেত্রের নির্দেশনায়। প্রকৃতির এক চুপচাপ অথচ প্রাজ্ঞ অভিযাত্রী।


প্রকৃতির এই দিকপালদের দক্ষতা আমাদের শেখায়, প্রযুক্তি ছাড়াও অনুভূতি, প্রবৃত্তি আর প্রাকৃতিক সংকেত দিয়ে দিক নির্ধারণ সম্ভব—আর সেটিই তাদের করে তোলে প্রকৃতির নাবিক।

আব্দুল্লাহ

×