ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

পানির অভাবে বোরো চাষ ব্যাহত, বিপাকে কৃষকেরা

 নিজস্ব সংবাদদাতা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ২৮ মার্চ ২০২৫

পানির অভাবে বোরো চাষ ব্যাহত, বিপাকে কৃষকেরা

ছবি: জনকণ্ঠ

পানি সংকটের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কৃষকরা বোরো ক্ষেতে সময়মতো সেচ দিতে পারছেন না। বর্তমানে বোরো ধান থোড় অবস্থায় রয়েছে, যা পর্যাপ্ত সেচের অভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরিমিত সেচ না পেলে ধানে চিটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে জলাশয়গুলো প্রায় শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ সংকট চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে পলি পড়ে জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে, ফলে কৃষকরা সেচের পানির অভাবে বিপাকে পড়েছেন।

জলাশয়গুলো ভরাট হওয়ায় বছরের প্রায় অর্ধেক সময় কৃষকরা কর্মহীন হয়ে পড়েন। আবার চৈত্র-বৈশাখ মাসে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাশয়গুলোর আশপাশের বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গিয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বাঞ্ছারামপুর কৃষিনির্ভর এলাকা হলেও জলাশয়ে পানি সংকটের কারণে অনেক সময় কৃষকদের বৃষ্টির ও জোয়ারের ওপর নির্ভর করে সেচ কাজ চালাতে হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ২০ একরের ঊর্ধ্বে ১২টি জলাশয় ভূমি অফিসের তালিকাভুক্ত। এছাড়া ২০ একরের মধ্যে ১৭টি জলাশয় রয়েছে। প্রশাসন থেকে এগুলো ইজারা দেওয়া হলেও দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় জলাশয়গুলো পলিমাটি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে চার হাজার হেক্টর জমির জন্য নির্ভরযোগ্য পানির উৎস শুকিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় পৌঁছেছে।

বিশেষ করে বালিয়াদহ, গালাচিপা, চন্দনবিল, ডেপারবিল, জয়কালীপুর গ্রুপ ফিশারিজ, মানিকপুর গ্রুপ ফিশারিজ, সাতবিলা বিল এলাকায় বোরো মৌসুমে সেচ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি সংকটের কারণে কৃষকরা গভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন এবং অনেকেই বাধ্য হয়ে বৃষ্টির ও জোয়ারের পানির ওপর নির্ভর করছেন। সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সেচ দিতে না পারায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কৃষকরা জানান, থোড় অবস্থায় থাকা ধানের জন্য পরিমিত সেচ প্রয়োজন, কিন্তু পানি সংকটের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ঝুনারচর গ্রামের কৃষক কবির হোসেন বলেন, "বিলে পানি না থাকায় আশপাশের বোরো ক্ষেতে সেচকাজ ব্যাহত হচ্ছে। আবার ধান কাটার সময় হলে অতিবৃষ্টির কারণে জমি তলিয়ে যায়, যা কৃষকদের জন্য দ্বিগুণ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।"

হায়দরনগর গ্রামের কৃষক ইমরান হোসেন বলেন, "আমাদের গ্রামের বিলে পানি না থাকায় এক হাজার বিঘা জমিতে বোরো চাষ বন্ধ হয়ে গেছে। বিলটি খনন করা হলে এই এলাকার কয়েক হাজার একর জমিতে পুনরায় বোরো চাষ সম্ভব হবে।"

রুপসদী গ্রামের ব্লক ম্যানেজার সালে আহমেদ বলেন, "জলাশয়ে পানি না থাকায় কৃষকদের বৃষ্টি ও জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে ভরা মৌসুমেও সময়মতো জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না।"

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বলেন, "ফরদাবাদ, রুপসদী, ছলিমাবাদসহ বিভিন্ন বিল শুকিয়ে গেছে। পানি সংকটের কারণে কৃষকরা জমিতে সঠিকভাবে সেচ দিতে পারছেন না, যার ফলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে জলাশয়গুলো খনন করা দরকার।"

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী আরা বলেন, "পলিমাটি পড়ে ভরাট হওয়া জলাশয়গুলো খননের জন্য আমাদের কাছে কোনো প্রস্তাব চাওয়া হয়নি। খননের জন্য তালিকা চাওয়া হলে আমরা প্রয়োজনীয় তালিকা পাঠাবো।"

কৃষকদের দাবি, জলাশয়গুলো দ্রুত খনন করা হলে পানি সংকট নিরসন হবে এবং এলাকার হাজার হাজার একর জমিতে আবারও বোরো চাষ সম্ভব হবে। সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার করা গেলে কৃষি উৎপাদন আরও বাড়বে, যা খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সায়মা ইসলাম

×